নোয়াখালীতে কলেজছাত্র জসিম হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
মামলা তুলে নিতে হুমকি, গভীর রাতে বাদীর বাড়িতে হামলা
লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দীন কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জমিস উদ্দিনকে (২০) মোবাইল ফোন করে ডেকে নিয়ে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ জাহানবাদ গ্রামে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী।
অপর দিকে মামলার আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নিহত জসিমের বাবা আবুল কাশেমকে হুমকি দিয়ে চলেছে এবং গভীর রাতে তার বাড়িতে হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনার পর এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম অতঙ্ক বিরাজ করছে এবং সন্ত্রাসীদের ভয়ে পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অভিযোগে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার ধীতপুর গ্রামের প্রবাসী মো. ফারুক হোসেনের স্ত্রী রেশমী আক্তার পিংকি (১৯) ও তার ননদ পারভীন আক্তারের (২১) সঙ্গে লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ও চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মো. জসিম উদ্দিনের (২০) পরকীয়া চলে আসছে। এ নিয়ে ননদ ও ভাবির মধ্যে একাধিক বার কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। ওই ঘটনার জের ধরে পিংকি জসিম উদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে মোবাইল ফোনে কল করে জসিম উদ্দিনকে লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থেকে ডেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জাহানাবাদ গ্রামে পিংকির বাবার বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে জসিম এর সঙ্গে পিংকির বাকবিতন্ডা হলে পিংকি তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মো. অনিক (৩২), বাবু (৩১), রাফাত (৩০), জাবেদ (৩৫), রৌশন আক্তার (৩৫), রহমান (২১), মিনহাজসহ (২১) আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জসিম উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি মারধর ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এতে সে অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মরত চিকিৎসক জসিম উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর বাবা আবুল কাশেম বাদী হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে পিংকিকে প্রথম আসামি করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে ২-৩ জনের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলার দায়ের করেন।
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের পর তাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। তিনি মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। এর ফলে আসামিরা তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তার (বাদীর) বসত বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। পরে তিনি ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহযোগিতায় প্রাণে রক্ষা পান। চন্দ্রগঞ্জের নাসির বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু আসামিদের পক্ষ নিয়ে এ হামলার ইন্ধন দিয়েছেন বলে তার দাবি। বাবলু বিরুদ্ধে ডাকাতি, সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্মের অনেক অভিযোগ রয়েছে। জসিমের বাবা আবুল কাশেম তার ছেলে হত্যার বিচার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন। তিনি মামলা সিআইডি অথবা পিআইবিতে হস্তান্তর করে মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘কলেজছাত্র হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদীর বসত বাড়িতে গভীর রাতে হামলার খবর তিনি জেনেছেন। ঘটনাস্থল লক্ষীপুর জেলায় হওয়ায় এ ব্যাপারে তিনি কিছু করতে পারছেন না। তবে মামলার আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামীর মা রৌশন আক্তারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকী আসামিরা গ্রেফতার করতে প্রতি রাতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে থাকায় তাদেরকে গ্রেফতারে বিলম্ব হচ্ছে। খুব শিগগিরই আসামিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন বলে তার দাবি।
Comments are closed.