দুই যুগ ধরে ফেনী-বিলোনীয়া রেলপথ বন্ধ, লুট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ
দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ফেনী-বিলোনীয়া রেলপথ বন্ধ থাকায় পরিত্যক্ত রেলপথের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। রেললাইন, স্লিপার, কাঠের পাত, পাথর ও রেল স্টেশনের অবকাঠামোর দরজা-জানালাও খুলে নিয়ে যাচ্ছে চোর। অনেক স্থান হয়ে যাচ্ছে হচ্ছে জবর দখল। রেললাইনের ওপর বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বসতঘর। দীর্ঘদিন ধরে এসব লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই।
তবে এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলে অচিরেই এই রেলপথের সব সম্পদ হয়ে যাবে লুট। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এই রেলপথ হতে পারে পুনরুজ্জীবিত। এতে সৃষ্টি হতো এই এলাকার কর্মস্থান, অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন চমক। দাবি উঠেছে পুনরায় রেল যোগাযোগ চালু করার।
১৯২৯ সালে ফেনী-বিলোনীয়ার রেলপথটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ২৬.৭০ কিলোমিটার রেলপথে বন্ধুয়া দৌলতপুর, আনন্দপুর, পীরবক্স মুন্সির হাট, নতুন মুন্সির হাট, ফুলগাজী, চিথলিয়া, পরশুরাম ও বিলোনীয়াসহ ৮টি রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ লোকসানের অজুহাতে ফেনী-বিলোনীয়ার এই রেলপথ বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত এই রেললাইনের স্লিপার, কাঠের পাত, পাথর ও রেল স্টেশনের অবকাঠামোর দরজা-জানালা চুরি হয়ে যাচ্ছে।
মাহবুবুল হক সেলিম নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, এক সময় রেল গাড়িই ছিল এখানকার জনগণের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সজিব নামে এক ব্যবসায়ী জানান, কিছু অসাধু রেল কর্মকর্তার অনৈতিকতার কারণে এই রুটটি লোকসান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনীয়া রেলপথ বন্ধ করে দেয়।
শামিম নামে আরও একজন জানান, অযত্নে-অবহেলায় সবগুলো স্টেশনের বেহাল দশা। স্টেশনগুলোর অবকাঠামো এখন ধ্বংসের পথে। রেললাইনের পাশাপাশি পথের দু’পাশের গাছগুলোও কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। রেললাইনের ওপরও অনেক স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ঘর।
ফেনী চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আইনুল কবির শামিম জানান, রেলপথটি আবার চালু হলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিলোনীয়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারে যোগ হবে নতুন মাত্রা। এতে ভাগ্য খুলে যেতো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু একাধিকবার এটি চালুর উদ্যোগ নিয়েও অদৃশ্য কারণে এটি স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ফেনী রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সফিকুর রহমান বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লাইনটি চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান জানান, স্টেশন ঘরগুলো দখলমুক্ত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রী ফেনী পরিদর্শনে এসে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।
ফেনী ২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানান, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে রেলপথের ৮টি স্টেশনের সম্পত্তিগুলো দখলমুক্ত করাসহ এটি দ্রুত চালুর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এটি হলে অন্তত বন্দর ঘিরে ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখর থাকবে স্থানটি। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন চাকা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
Comments are closed.