ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ফসল ও মাছে ক্ষতি ৩১০ কোটি টাকা
ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ২৬৩ কোটি টাকার ফসল ও ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। এ দুটি খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৩১০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তর এ ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে।
সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দেশের উপকূলবর্তী ১৬টি জেলায় ৭২ হাজার ২১২ টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। ১০৩ উপজেলার দুই লাখ ৮৯ হাজার ছয় হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, বুলবুলের কারণে ৫০ হাজার ৫০৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, সরিষা, খেসারি, মসুর ও পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ধানের ক্ষতি সম্পর্কে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ৪৭ কোটি টাকা রোপা আমনে এবং ৭৯ কোটি টাকা সবজিতে ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত রোববার ভোররাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার ফসলের ক্ষতি হয়।
মন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির মধ্যে রোপা আমনের দুই লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৮ হেক্টর, সরিষার এক হাজার ৪৭৬ হেক্টর, শীতকালীন সবজির ১৬ হাজার ৮৮৪ হেক্টর, খেসারির ৩১ হাজার ৮৮ হেক্টর, মসুরের ১৯৫ হেক্টর, পানের দুই হাজার ৬৬৩ হেক্টর এবং অন্যান্য তিন হাজার ১২৬ হেক্টর জমি রয়েছে।
এই ক্ষয়ক্ষতিতে বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বোরো ও আমন মৌসুমে অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছিল। এবার মাঠে যে আমন ফসল আছে, তার ফলন খুব ভালো হবে। এছাড়া ধানে চিটা কম হবে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুলবুলের আঘাতে দেশের ১০টি উপকূলীয় জেলায় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলার ৬ হাজার ৬৯৬টি পুকুর বা দিঘী ও ১৫ হাজার ১১৩টি ঘের ও ১৩০০ দিঘী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০০২ দশমিক ৭ মেট্রিক টন মাছ ও ২০০ দশমিক ২ মেট্রিক টন চিংড়ি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের আয়তন ৯ হাজার ৯২১ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত দিঘীর আয়তন ৫৩৭ হেক্টর।
মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ সমকালকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের নতুন করে চাষের আওতায় আনা হবে। এ জন্য তাদের মাছ চাষের উপকরণ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে সরকার। মৎস্যজীবীরা যেন দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
Comments are closed.