হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরলেন আসমা
হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন জোহরা খাতুন আসমা। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে হারানোর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোনের কাছে ফিরলেন তিনি।
রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আসমাকে তার মা, ভাই ও বোনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এসময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।
নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আসমার আশ্রয়দাতা লালন-পালনকারী ফাতেমা জোহরা সীমা, মনোয়ারা বেগম, জেলা টেলিফোন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলু, সংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুসহ উপস্থিত অতিথিরা আসমাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন।
সংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সঞ্চালনায় অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন এ পুনঃএকীকরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, বিশেষ অতিথি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আসমার আশ্রয়দাতা লালন-পালনকারী ফাতেমা জোহরা সীমা, মনোয়ারা বেগম, আসমা, আসমার চাচা, বোন, সিনিয়র সাংবাদিক মনিরুজ্জামান চৌধুরী, মানবিক সংগঠক সুমন নূরসহ অনেকে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার হারিয়ে যাওয়ার ২০ পর আসমা তার স্বজনদের ফিরে পান। এ বিষয়ে বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশতি হয়।
জানা যায়, প্রথমে ২০০২ সালে আসমা হারিয়েছিলেন বলে জানা গেলেও পরে জানা যায় যে তিনি ২০০১ সালে চট্টগ্রামে হারিয়েছিলেন।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেদিনের ছোট্ট আসমা অবশেষে খুঁজে পেয়েছেন তার স্বজনদের।
চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়ার পর এক পরিবার বাসার কাজ করানো জন্য পথ থেকে তাকে নিয়ে যায়। একদিন ওই বাড়ির লোকজন মারধর করলে শিশুটি আবার পথে বেরিয়ে পড়ে।
রাস্তায় কাঁদতে দেখে আসমাকে তুলে নিয়ে কয়েকদিন নিজের হেফাজতে রাখেন নোয়াখালীর ফেরদৌসী নামে এক নারী। কিন্তু কেউ খোঁজ খবর করছে না দেখে তিনি আসমাকে নিয়ে আসেন নিজের এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর গ্রামে।
তারপর নিয়তি তাকে বিভিন্ন যায়গায় টেনে নিয়েছে। পাঁচ বছর ছিলেন নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এরপর আরো দুই বাসায় আরো ছয় বছর থেকে পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায় ফিরে আসেন। এরপর আসমাকে নিজের বাবার বাড়ি একলাসপুরে পাঠিয়ে দেন ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী ফাতেমা জোহরা সীমা।
তখন ফাতেমার বাবার বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছিল। সেখানেই আসমার সঙ্গে এক নির্মাণ শ্রমিকের মন দেওয়া-নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যান চট্টগ্রামে। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আসমা। সুখে দুঃখে ভালোই কাটছিল জীবন। এরপর স্বামী প্রবাসে চলে গেলে আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসেন আসমা। আবার আশ্রয় নেন ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এবার আসমার শিকড়ের সন্ধান শুরু করেন ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী ফাতেমা। আসমা শুধু বলতে পারেন যে তার বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নড়াই গ্রামে। এটুকু তথ্য নিয়েই স্থানীয় সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান ফাতেমা।
সাংবাদিক মিঠু ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিটিভি ও ইত্তেফাক প্রতিনিধির মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ইমোতে ভিডিও কলে কথা হয় আসমার মা, ভাইয়ের সঙ্গে। এরপর রোববার (৪ অক্টোবর) তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো।
Comments are closed.