বেগমগঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় বাহিনী

অপরাধের স্বর্গরাজ্য

153

নোয়াখালীর দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা বেগমগঞ্জ। ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। একসময় শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে জেলার সূতিকাগার ছিল ঐতিহ্যবাহী এই জনপদ। সেই শান্তির জনপদ বেগমগঞ্জ এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে নানা নামের উচ্ছৃঙ্খল বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও প্রশাসনের নিষ্ফ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে এসব বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় পুরো উপজেলা। ফলে অস্থির সাধারণ জনজীবন। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বেগমগঞ্জের একলাশপুরে বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনার মধ্য দিয়ে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবুল হোসেন বাঙ্গালীর কণ্ঠেও উঠে আসে ধীরে ধীরে ভয়ংকর জনপদ হয়ে ওঠার কথা। সমকালের কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একসময় নানা সংগঠনের সংস্কৃতি চর্চায় মুখরিত ছিল বেগমগঞ্জ। কিন্তু সেই বেগমগঞ্জ এখন অপরাধের অভয়ারণ্য। এ জন্য রাজনৈতিক কোন্দল, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেন তিনি।

বেপরোয়া দেলোয়ার :সম্প্রতি বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে পূর্ব একলাশপুর গ্রামের দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। একলাশপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, দেলোয়ার একসময় যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একলাশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে সে। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি আলমগীর কবির আলো ও ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরের হাত ধরে যুবলীগে যোগ দেয়। ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেলোয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবির আলোর পক্ষে অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখলে নেতৃত্ব দেয়। একলাশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক নাইমুদ্দীন রাসেল বলেন, ২০১৮ সালের মার্চে একলাশপুর গ্রামে জোড়া খুন ও শরীফপুরে হাসান খুনের মামলার আসামি হয়েও দেলোয়ার এলাকায় ঘুরে বেড়াত বীর দর্পে। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজর তার দিকে পড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর কবির আলো বলেন, দেলোয়ারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) শাহাজাহান শেখ জানান, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা আগের।

পাড়ায় পাড়ায় বাহিনী :বেগমগঞ্জের একলাশপুরে নারীর সঙ্গে বর্বর ঘটনার ৩২ দিন পরও সাধারণ মানুষের মুখ না খোলার কারণ হিসেবে দেলোয়ার বাহিনীর ভয়ের কথা বলছেন স্থানীয়রা। এরকম বাহিনী রয়েছে বেগমগঞ্জের অধিকাংশ ইউনিয়নে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বাহিনী সক্রিয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপের ছত্রচ্ছায়ায়। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কদরও বেশি। এ সুযোগ নেয় থানা পুলিশ। তারা বাহিনীগুলোকে নিজেদের প্রয়োজনে বাঁচিয়ে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেগমগঞ্জে প্রধান দুটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে ৩৬ মামলার আসামি সুমন ওরফে খালাসি সুমন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে ৩৮ মামলার আসামি সম্রাট বাহিনীর প্রধান সম্রাট। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বেগমগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে। এ ছাড়া আমানউল্যাপুরে মন্নান বাহিনী, মুন্সি বাহিনী, বাবু বাহিনীও বেশ সক্রিয়। গত ৩ মার্চ আমানউল্যাপুরে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হোসেন। এ খুনের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।

গোপালপুরে জিকু কামাল বাহিনী, বাঘ মিন্টু বাহিনী, মাসুম বাহিনী, পিচ্চি রাসেল বাহিনী, মুজিদ বাহিনী, হাছান বাহিনী, রকি বাহিনী, দুলাল বাহিনী, পাটোয়ারী বাহিনী, দেলোয়ার বাহিনী ও জনি বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জিরতলী ইউনিয়নে মঞ্জু বাহিনী, রাজগঞ্জ ইউনিয়নে সেন্টু বাহিনী ও ছয়ানী ইউনিয়নে রয়েছে বাবু বাহিনী। আলাইয়ারপুর ইউনিয়নে লোকমান বাহিনীর প্রধান লোকমান এর আগে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। একই ইউনিয়নে রয়েছে টিটু বাহিনী, রুবেল বাহিনী ও রহিম বাহিনী।

চৌমুহনী পৌর এলাকা নিয়ে বেগমগঞ্জের পূর্বাঞ্চল। এ অঞ্চলের হাজীপুর, শরীফপুর, কাদিরপুর, রসুলপুর, কুতুবপুরে রয়েছে সুমন বাহিনী, সম্রাট বাহিনী ও সুজন বাহিনী। সুজন কাদিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সে গত বছর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে আছে। কাদিরপুরের লন্ডন মার্কেট এলাকায় রয়েছে শাকিল বাহিনী। কুতুবপুর, রসুলপুর, দুর্গাপুর ও সেতুভাঙ্গা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসী সম্রাটের ভাগিনা রায়হান।

নোয়াখালীর আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর একলাশপুর ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় এখানে মাদক ব্যবসার স্পটও বেশি এবং বাহিনীগুলোর আয়ও বেশি। দেলোয়ার বাহিনীর প্রতিপক্ষ কাটা রাসেল একলাশপুর বাজার, কেন্দুয়া ও গাবুয়া এলাকায় সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজি করে আসছে। তার রয়েছে অস্ত্রধারী বাহিনী। গত বছর মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব একলাশপুর গ্রামে মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম রবিন নামের দুই যুবককে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে এ বাহিনী। একই বছরের ২৫ অক্টোবর একলাশপুরের ভিআইপি সড়ক এলাকায় শাহাদাত হোসেন পলাশ নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা।

৯ মাসে ১৩ খুন, বাড়ছে ধর্ষণ :বেগমগঞ্জে গত ৯ মাসে রাজনৈতিক দলের কর্মী, গৃহবধূ, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসহ ১৩ জন খুন হয়েছেন। তবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। নির্যাতিত হলেও অধিকাংশ মানুষ পুলিশের কাছে যান না বলে জানান স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, মামলার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে না। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আসে।

জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী সমকালের কাছে দাবি করেন, সম্রাট ও সুমন বাহিনী ছাড়া উপজেলায় আর কোনো বাহিনী নেই। এ দুই বাহিনীর নেতারা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় প্রায়ই মাদক ব্যবসা, খুন ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ বলা যাবে না।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন সমকালকে বলেন, সন্ত্রাসীদের শিকড় উপড়ে ফেলতে পুলিশ কাজ করছে। জেলার কোথাও কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীর অস্তিত্ব রাখা হবে না।

অপরাধে এগিয়ে জনপ্রতিনিধিরাও :এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়নগুলোতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বাহিনীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। যেমনটি ঘটেছে একলাশপুরেও। স্থানীয়রা জানান, আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এসব বাহিনীকে হাতে রাখতে চান। ফলে বাহিনীগুলোর ভয়ে সাধারণ মানুষও মুখ খোলেন না। সম্প্রতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদের ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ২০১৯ সালের ১২ মে কুতুবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেনকে অস্ত্র, মাদকসহ ডিবি পুলিশ আটক করে। গত ১ মে জীরতলী বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের সময় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিলন তার শটগান থেকে গুলি করেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কারামুক্তির পর তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় ক্ষমতাসীন দলের আরেকটি গ্রুপ। তবে চেয়ারম্যানরাও সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা থেকে রেহাই পাননি। গত ৬ মে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল মিন্টু। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানকে লক্ষ্য করে গুলি করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডাররা। এ নিয়ে গত ১১ মে উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যানদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. এবিএম জাফর উল্যা সমকালকে বলেন, বেগমগঞ্জের রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছেন। রাজনৈতিক নেতারা কঠোর হলে সন্ত্রাসীদের শিকড় এত গভীরে যেত না।

বেগমগঞ্জজুড়ে এসব বাহিনীর প্রতাপের কথা স্বীকার করেছেন খোদ স্থানীয় সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরণও। তিনি সমকালকে বলেন, তিনি কোনো বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন না। সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করতে তিনি স্থানীয় থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব বাহিনীকে কারা লালন করে- এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য কিরণ বলেন, প্রভাবশালীরাই এসব বাহিনীকে ব্যবহার করে। এদের মদদদাতা কারা, সেটা বের করার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর।

তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টার দিকে বাতাসে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে লামচর গ্রামের সর্দার বাড়ি সংলগ্ন ডোবায় অর্ধগলিত একটি মরদেহ দেখতে পায় তারা।

চাটখিলে বৃদ্ধের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

বেলায়েত হোসেন আশা করেন দলীয় নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় সর্বসাধারনের ভালোবাসায় তিনি বিপুল ভোটে চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।

চাটখিলে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলায়েত এর মতবিনিময়

নোয়াখালীর চাটখিলে কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মানে চাটখিল উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে চাটখিল কামিল মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি সাংবাদিক মেহেদী হাছান রুবেল ভুঁইয়া’র পৃষ্ঠপোষকতায় ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চাটখিলে কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

তিনি দেশবাসীকে মাতৃভাষায় বুঝে বুঝে কুরআন পাঠের আহ্বান জানান।

সারাদেশে অর্থসহ কুরআন পাঠ দিবস পালিত

Comments are closed.