নোয়াখালীতে গৃহহীন ৯ পরিবার পাচ্ছে পুলিশের দেওয়া ঘর
১০ বছর আগে বিবি আয়েশার (৪৯) স্বামী মারা যাওয়ার পর ঋণের বোঝা চুকাতে বিক্রি করে দিয়েছিলেন সব জায়গা-জমি। বৃদ্ধা শাশুড়ি ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল অন্যের জায়গায়। ছিল না থাকার ঘর। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে যা পেতেন, তা-ই দিয়ে এক-আধপেটা খেয়ে যাচ্ছিল তাঁদের দিন। স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার জায়গা পেতে যখন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিবি আয়েশা, তখনই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নোয়াখালী সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামের এই নারীকে তিন শতক জায়গাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ আধা পাকা বসতঘর উপহার দিতে যাচ্ছে জেলা পুলিশ। ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিবি আয়েশাকে ঘরটি হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু বিবি আয়েশা নন, জেলার নয়টি উপজেলার নয়টি থানার অধীন একটি করে অসহায়, দুস্থ পরিবারকে একটি করে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে নোয়াখালী জেলা পুলিশ। ‘মুজিব বর্ষে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর পুলিশের পক্ষ থেকে সারা দেশের প্রতিটি থানায় ভূমি-গৃহহীন একটি করে পরিবারকে জায়গাসহ ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর অংশ হিসেবে নোয়াখালীতেও নয়টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে একটি করে আধা পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
এ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় পুলিশের খাকি পোশাক দেখলে মানুষ ভয় পেত। মানুষের মধ্য থেকে সেই ভয় দূর করতে পুলিশের পোশাক পরিবর্তনসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে করোনাকালে সারা দেশে পুলিশের মানবিক কর্মকাণ্ড সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ৩ শতাংশ জায়গা কিনে সেখানে ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও শৌচাগারের ব্যবস্থাও। প্রতিটি ঘরের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, যেখানে উপকারভোগীরা চাইলে শাক-সবজি লাগিয়ে নিজেদের চাহিদার জোগান দিতে পারবেন।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় উপকারভোগীরা হলেন সুধরামে বিবি আয়েশা, হাতিয়ায় মো. জামাল উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জে নুর জাহান, বেগমগঞ্জে বুলবুল পেয়ারা, সেনবাগে আশ্ববীর নেছা, চাটখিল থানায় জসিম উদ্দিন, সোনাইমুড়ী থানায় শহিদুল ইসলাম, চরজব্বর থানায় সখিনা খাতুন ও কবিরহাট থানায় কমলা খাতুন। তাঁদের মধ্যে একজন গৃহিণী ও দুজন ভিক্ষুক। আর বাকিদের মধ্যে চারজন গৃহকর্মীর কাজ করেন। একজন দিনমজুর ও একজন একটি লেপ-তোশকের দোকানে কাজ করেন।
উপকারভোগী আরেক নারী কবিরহাট উপজেলার চর বৈশাখীর বাসিন্দা কমলা খাতুন (৫৪)। নিজেদের ভিটামাটি না থাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে খালপাড়ের জায়গায় ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে দিন যাপন করছিলেন চার সন্তান নিয়ে। তিনি বলেন, কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি, নিজেদের একটি ঘর হবে। সেই ঘরে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জায়গাসহ নতুন ঘর পেয়ে সন্তানদের নিয়ে বাঁচার এক নতুন শক্তি পেয়েছেন তিনি।
Comments are closed.