চাটখিল থেকে আটক জঙ্গীদের স্বীকারোক্তি: ‘যুদ্ধে’র প্রস্তুতি নিতে চায় তারা
নিরীহ মানুষ হত্যা এবং দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে চায় জঙ্গিরা। রিমান্ডে পুলিশকে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য মো. শাহজাহান। শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ও একই সংগঠনের সদস্য জঙ্গি মেহেদি হাসান জয়কে (২১) নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালীর চাটখিল থানার পুলিশ জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের ঘাষিপুর গ্রাম থেকে মেহেদিকে ও তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরদিন ঢাকার শ্যামলী থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের একটি দল তাদের গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় চাটখিল থানায় মামলা করা হয়। মেহেদি ঘাষিপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে এবং শাহজাহান একই ইউনিয়নের নোয়াখলা গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই, একটি ল্যাপটপ ও একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাটখিল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তিনি আরও জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী মেহেদি কোনো তথ্য দেয়নি। তবে শাহজাহান অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সে জানায়, মেহেদি তার স্থানীয় গুরু। শাহজাহান চাটখিল পাঁচগাঁও মাহাবুব সরকারি ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী। ইন্টারনেট, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে বিভিন্ন লিঙ্কের সূত্র ধরে এক বছর আগে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যুক্ত হয়। সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার-বিরোধী লেখা পোস্ট দিত নিয়মিত। শাহজাহান আরও জানায়, লুনক নামে একটি বইয়ে লেখা পেয়েছেন, নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে হবে এবং দেশে একটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এই বিষয়ে তাদের এক গুরু একই কথা বলেছেন। সে অনুযায়ী শাহজাহান এক জঙ্গি নেতার মাধ্যমে প্রশিক্ষণও নিয়েছে। তবে মামলার তদন্ত স্বার্থে ওই জঙ্গির নেতার নাম-ঠিকানা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। রেজাউল করিম জানান, শিবিরের সাথী মেহেদির সঙ্গে শাহজাহানের পরিচয় হয় চাটখিলের শ্রীনগর বাইতুল মামুর জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসার-যাওয়ার সময়। শাহজাহানকে মূলত জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ত হতে সহযোগিতা করেন মেহেদি। প্রতিদিন নামাজ শেষে মেহেদি জঙ্গি ও জিহাদি বইপুস্তক নিয়ে শাহজাহানকে তালিম দিত। শাহজাহান একদিন রাতে ল্যাপটপে অনলাইনে জঙ্গি সংগঠনের লেখা পড়ার সময় তার বাব-মা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে এসব পথ থেকে দূরে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
চাটখিল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মেহেদিকে ফের রিমান্ডে আনবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন দুই জঙ্গি সদস্যের কাছ থেকে রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।
Comments are closed.