চাটখিলে সংখ্যালঘু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ!
একটি মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যালঘু পরিবারের একমাত্র মহিলা সদস্যাকেও নিজের পৈত্রিক ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য অমানবিক নির্যাতন করে চলেছে এলাকার গুটিকয়েক ব্যক্তি। নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে মহিলাটির যে এখন তার থাকার জায়গা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথটুকুও প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে নির্যাতিত পরিবারের একমাত্র মহিলা ওই সদস্য এবং এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র কুমার দের জায়গা জমির ওপর এলাকার কতিপয় ব্যক্তির চোখ পড়ে। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের প্রথম ধাপ হিসাবে ১৯৭৮ সনের এক রাতে রবীন্দ্র কুমারের ঘরে ঢুকে তাকে খুন করে। ১৯৮৯ সনে মৃত রবীন্দ্রের বড় ছেলে প্রদীপ কুমার দেকে পথিমধ্যে সন্ত্রাসীরা খুন করে।
পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সনে এলাকার জনৈক আবদুল মালেক এবং রুস্তম প্ররোচনা দিয়ে ও আটকে রেখে ছোট ভাই প্রবীর চন্দ্র দেকে ধর্মান্তরিত করে তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে জায়গা জমি দখল করতে আরম্ভ করে। রবীন্দ্র কুমারের পরিবারেরএকমাত্র সদস্য শিপ্রা রানী বাদী হয়ে ২০১২ সনে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে স্বত্তের মামলা করলে ২০১৫ সনে আদালত শিপ্রা রানীর অনুকুলে এক দশমিক সাড়ে ষাট একর সম্পত্তির রায় প্রদান করেন।
মামলা চলাকালে ও রায় হওয়ার পরেও এলাকার ঐসব ব্যক্তিরা প্রবীর চন্দ্র দেকে (ধর্মান্তরিত সাইফুল ইসলাম ) দিয়ে আদালত থেকে রায়ে প্রদত্ত জায়গা তাদের নামে দলিল করে নেয়। এরপর শিপ্রা রানী দের ওপর নির্যাতন আরও বৃদ্ধি করে। শিপ্রা রানী আদালতে রায়ে প্রাপ্ত জায়গাও ভোগ করতে পারছেন না। পিতার ঘরটিও মেরামত করতে পারছেন না। ঘর ঝরে ঝরে পড়ছে। টিনের চালাও ভেঙ্গে গেছে। এ ঘরে কোন মানুষ বাস করার অবস্থা নেই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। রাতে বাড়িতে ও ঘরে ঢিল ছুঁড়ে মারে।
একই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিক উল্যা জানান, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা অর্থবল ও জনবলে বলীয়ান। তারা আদালত এবং এলাকার কাউকে পাত্তা দেয় না। আমরা শিপ্রা রানীকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি।
প্রবীর কুমার দে (ধর্মান্তরিত সাইফুল ইসলাম ), ইন্ধনদাতা আবদুল মালেক ও রুস্তমকে বাড়িতে খোঁজ নিয়ে ও মোবাইল ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।
চাটখিল ইউনিয়নের ৬নং পাঁচগাও ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জুয়েল পাটোয়ারী জানান, রবীন্দ্র কুমারের পরিবারের ওপর অমানবিক নির্যাতন করছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। ঐসব ব্যক্তিরা আইন আদালত কিংবা এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানকেও মানে না।
পাঁচগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুল করিম বাবলু বলেন, ‘রবীন্দ্র কুমারের পরিবারের ওপর যে নির্যাতন চলছে তা সম্পূর্ণ অমানবিক। কয়েকবার এ ঘটনার সমাধা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তবে আমি আশা ছাড়িনি। একমাত্র সদস্য শিপ্রা রানীকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাঝে মাঝে কিছু সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো জানান, এ ধরনের অমানবিক ঘটনা কোন প্রকারে কেউ মেনে নেওয়া হবে না। এ অমানবিক ঘটনা যাতে সমাধা করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টা করে যাব। সঙ্গে সঙ্গে সরকারি প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
Comments are closed.