কমলনগরের ‘স্বপ্নের সেতু’ এখন নড়বড়ে, চলছে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত
দুর্ভোগে পড়েছে শত শত পরিবার
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে স্থানীয়দের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ‘স্বপ্নের সেতু’ নামের সেই সাঁকোটি মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেঙে গেছে।
চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ফের দুর্ভোগে পড়েছে শত শত পরিবার।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে না আসায় ফের স্থানীয় যুবকরা সংস্কারে হাত দিয়েছেন। সোমবার থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হয়ে ফের চলাচল উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোগ নেওয়া যুবকরা।
উপজেলার পাটারিরহাট ইউনিয়নের জারিরদোনা খাল ভেঙে চলাচলের রাস্তা (বেড়িবাঁধ) বিলীন হয়ে যায়। যে কারণে গত ৬ বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে স্থানীদের। দীর্ঘদিন থেকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে কাটলেও নজরে আসেনি কারও। উপায় না পেয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে নিজেরাই নিজেদের চলাচলের জন্য ‘স্বপ্নের সেতু’নামের ওই সাঁকোটি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি অস্বাভাবিক জোয়ারে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। বর্তমানে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ায় ফের সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ওইসব যুবকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাঁকো নির্মাণের ওই স্থানে বেড়িবাঁধ ছিল। বাঁধের ওপর দিয়ে পাটারিরহাট-খায়েরহাটে আসা-যাওয়া পথ (রাস্তা) ছিল। খাল পাড়ের ওই বেড়িবাঁধটি ভেঙে গেলে চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী। চলাচলের রাস্তা ভেঙে খালে পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে তুলতে পারতো না। শিক্ষার্থীরা যেতে পারছিলনা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায়। বর্ষা এলেই গৃহবন্দি হয়ে পড়তো এলাকাবাসী। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় স্টার ক্লাব, নিউ তারুণ্য তরঙ্গ সংসদ, কমলনগর স্টার ক্লাব, স্টুডেন্ট সংসদ ও জুনিয়র একতা সংঘ নামে চারটি সংগঠন সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরে তারা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ টাকা, কাঠ ও বাঁশ সংগ্রহ করে সাঁকোটি নির্মাণ করেন। এতে ব্যায় হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। নিজেরা স্বেচ্ছায়শ্রম না দিলে নির্মাণ ব্যয় ৫ লাখ ছাড়িয়ে যেত। সাঁকোটি নির্মাণ হওয়ায় দুর্ভোগে থাকা শত শত পরিবার পেয়েছেন সাময়িক স্বস্তি।
সাঁকোটি নির্মাণ করায় গত ১০ মাস ওই খাল পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমেছে। চলতি মাসের কয়েক দফা অস্বাভাবিক জোয়ারে সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় আবারও দুর্ভোগ শুরু হয়। যে কারণে ফের চলাচলের উপযোগী করতে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো মেরামত করছেন যুবকরা।
স্থানীয় কমলনগর স্টার ক্লাবের সহ-সভাপতি মো. মাকছুদুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি। উপায় না দেখে আমরা নিজেরাই কাঠ-বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে সাঁকোটির নাম দিয়েছি ‘স্বপ্নের সেতু’। ওই সাঁকো শত শত পরিবারের ভরসা ছিল। সম্প্রতি জোয়ারে সাঁকোটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় সংস্কারে হাত দিয়েছি। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ জিও ব্যাগ নিয়ে পুননির্মাণ করলে এলাকায় স্বস্তি ফিরবে।
Comments are closed.