৫১ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে ‘হিরো’ রামি শেহতা

0 72

কী এক ভয়ংকর ঘটনাই না ঘটে যেতে পারত ইতালিতে! গত বুধবার ৫১ শিক্ষার্থীসহ একটি স্কুলবাস অপহরণ করেন এর চালক ইউসেনু। কয়েক শিশুকে তার দিয়ে বাঁধেন তিনি। এরপর পেট্রল ঢেলে পুরো বাসটি পুড়িয়ে দেন। তবু বেঁচে গেল অর্ধশত শিশুর প্রাণ। যার কৃতিত্ব একজনেরই। তার নাম রামি শেহতা। সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে রামিকে এখন ‘নায়ক’ বলছে ওর সহপাঠীরা ।

পুলিশ ও গণমাধ্যমের কাছে ‘নায়ক’ রামি শেহতার সাহসিকতার বর্ণনাও দিয়েছে এই শিশুরা । শিশুরা জানায়, বাস থামিয়ে চালক ইউসেনু অনেককে বেঁধে ফেলেন। সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেন তিনি। কিন্তু রামি ওর মোবাইল ফোন সেটটি লুকিয়ে ফেলে। তখন পুরো বাসের সবাই কঠিন সময় পার করছিল। এর মধ্যে ইউসেনু বাসে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন, আর বলতে থাকেন, ‘এখান থেকে কেউ বাঁচবে না।’
এরই মধ্যে রামি শেহতা লুকিয়ে নিজের কাছে থাকা মোবাইল সেটটি দিয়ে প্রার্থনা করার ভান করে পুলিশের কাছে ফোন করে ঘটনাটি জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ বাসের পেছনের জানালার কাচ ভেঙে শিশুদের উদ্ধার করে। পুরো বাস পুড়ে গেলেও কোনো প্রাণহানি হয়নি। কয়েকটি শিশু সামান্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চালক ৪৭ বছর বয়সী ইউসেনুকে আটক করেছে পুলিশ।

উদ্ধারের পর রামি শেহতার এক সহপাঠী বলে, ‘ও–ই তো আমাদের নায়ক।’

আটক বাসচালক ইউসেনুর জন্ম আফ্রিকার সেনেগালে। তবে ইউসেনুর ইতালির নাগরিকত্ব রয়েছে। কিন্তু ৫০ শিশুর প্রাণ রক্ষাকারী রামি শেহতার এবং ওর বাবা-মায়ের ইতালির পাসপোর্ট মেলেনি। অথচ পুরো পরিবার মিসর থেকে পাড়ি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে বসবাস করছে। রামির জন্মও ২০০৫ সালে ইতালিতে। কিন্তু ইতালির নাগরিকত্বের স্বীকৃতি এখনো পর্যন্ত রামি পায়নি।
রামির বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে ওর দায়িত্ব পালন করেছে। ঘটনার পরে যখন আমার ছেলেকে দেখতে পাই, সে সময় ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আর এখন যদি রামি ইতালির নাগরিকত্ব পেয়ে যায় তাহলে খুব ভালো হবে। কারণ আমরা এই দেশকে ভালোবাসি, এখানে বাস করতে চাই।’
শিশুদের উদ্ধারের পর মিলানের কৌঁসুলি ফ্রান্সেস্কো গ্রেকো বলেন, এটা একটা ‘অলৌকিক ঘটনা’। ওই বাসের মধ্যে অনেকে মারাও যেতে পারত। পুলিশ অসাধারণ কাজ করেছে। তারা বাস ঠেকিয়ে দিয়ে ওই শিশুদের উদ্ধার করেছে।

ওই ঘটনার ছবিতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল ছিল মিলানের কাছেই। দুর্ঘটনাকবলিত ওই বাস এবং প্রাইভেট কার পুড়ে গেছে।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চালক ইউসেনু বলেছেন, ইতালি যে অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে, সেই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।