১১ বিষয়ে অকৃতকার্য ১৯ জনের এসএসসির ফরম পুরণ
কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়
শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে ১১ বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীসহ ১৯জন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এজন্য বোর্ড ফি’র বাইরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও গুঞ্জন রটেছে। এদিকে ১১ বিষয়ের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে ফরম পুরণ করার খবর জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অভিভাবকরা। এ বিদ্যালয় থেকে এবার মোট ৪৯জন শিক্ষার্থীর ফরম পুরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ০৯জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১০জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩০জনসহ মোট ৪৯জন শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে মানবিক বিভাগের ০৭জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১২জনসহ মোট ১৯জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনিয়ম ও তথ্য গোপনের আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে সকল শিক্ষার্থীকে পাস দেখিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে চুড়ান্ত তালিকা প্রেরণ করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অকৃতকার্য ১৯জনের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস (রেজিঃ নং-১৬১১৩২০২৮৭) ১২ বিষয়ের মধ্যে ১১ বিষয়েই অকৃতকার্য হয়েছিল। এছাড়া ০৮ বিষয়ে একজন, ০৭ বিষয়ে দুইজন, ০৬ বিষয়ে একজন, ০৫ বিষয়ে দুইজন, ০৪ বিষয়ে একজন, ০৩ বিষয়ে পাঁচজন ও এক বিষয়ে ০৬জন অকৃতকার্য শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র বাইরে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আমাদের বাচ্চারা সারা বছর কষ্ট করে পড়ালেখা করে পরীক্ষায় পাস করলেও মেধাহীন ছাত্রছাত্রীদেরকেও টাকার বিনিময়ে একই পাস দেখিয়ে ফরম পুরণ করাটা দুঃখজনক। আমরা একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি মোটেই আশা করিনি।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ ওইসময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তিনি দীর্ঘদিন সহকারি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও এ ঘটনার দায় এড়িয়ে বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও তৎকালীন (সদ্য অবঃ প্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফরম পুরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক মোঃ শহীদ উল্যাহ জানান, ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনুরোধে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদেরও ফরম পুরণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য প্রশান্ত সুভাষ চন্দকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ফরম পুরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমি দেশে ছিলাম না। তবে শুনেছি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল পরীক্ষার্থীকে পাস দেখিয়ে তালিকা উপস্থাপন করায় পরিচালনা কমিটি কোন বাধা প্রদান করেনি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ কামাল পারভেজ জানান, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীকে পাস দেখিয়ে ফরম পুরণের আবেদন করা হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী টেস্ট পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও তাদের ফরম পুরণে নিষেধাজ্ঞা আছে। কেউ এ নিয়মের বাইরে অনিয়ম করলে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অবহিত করা হবে।
Comments are closed.