হাতিয়ার কৃতি সন্তান এখন ইউটিউব স্টার
বনি আমিন বিশ্বের সেরা পর্যটকদের মধ্যে একজন। এ যাবত তিনি অর্ধশতাধিক দেশ ভ্রমন করেছেন। বেশ কয়েকটি দেশ তিনি ৭থেকে ১০ বারও ভ্রমণ করেছেন। সব সময় তাঁর সহধর্মিনী ভেরোনিকা আমিনও ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তিনি কেবল পর্যটকই নন, তিনি একজন ইউটিউব স্টারও। ‘Boni Amin’ নামে তাঁর একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে যার সাবস্ক্রাইবস এখন প্রায় আড়াই লক্ষ। ইউটিউব চ্যানেলে দেশভ্রমণ এবং ভ্রমণের ডকুমেন্টারির পাশাপাশি সমসাময়িক সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে দুনিয়া জুড়ে ঝড় তুলেছেন নোয়াখালী জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলারই কৃতি সন্তান ভিনজগতের এক অমানুষ খ্যাত বনি আমিন। হাতিয়া দ্বীপ তাঁর জন্মস্থান হলেও তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে ওই দেশেই আছেন। তবে বছরে অন্তত দুই থেকে তিন বার তিনি নাড়িরটানে বাংলাদেশে আসেন।
ইতোমধ্যে তিনি ইউটিউব স্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের মাঝে। তাঁর প্রচারিত ভিডিও’র সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শতাধিক। তিনি নেট জগতে এমনই পরিচিতি পেয়েছেন যে, এখন তিনি নিজকে আর আড়াল করতে পারছেন না। পৃথিবীর যে দেশেই তিনি যান না কেন, সেই দেশের বাংলাভাষীদের দেখা মিললে সবাই তাকে চেনে ফেলে এবং ঘিরে ধরে কুশল বিনিময়, যৌথ ছবি ধারণ ও অটোগ্রাফ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাঁর ভক্তরা ।
তাঁর জন্ম ১৯৫৯ খ্রী: ১৮ মে হাতিয়া দ্বীপের চরচেঙ্গা গ্রামে নানা হাবিব উল্যাহ মিয়ার বাড়িতে। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুর রবের বাড়ি ছিল হরনী ইউনিয়নের রাধাখালী গ্রামে। পরবর্তীতে তারা হাতিয়া শহরের পূর্বপাশে স্থায়ীভাবে বসতি গড়েন। বনি আমিনরা ৫ ভাই ৩ বোন, ৪ ভাই ১ বোন অষ্টেলিয়ায় সেটেল্ড। তিনি ১৯৯১ খ্রী: মাইগ্রেশন নিয়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় গমন করেন। ১৯৯৪ খ্রী: তিনি অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টধারী নাগরিকত্ব গ্রহন করেন। তিনি হাতিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে এসএসসি, চিটাগং মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি ও চবি থেকে আইন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টারস ডিগ্রি নেন। এরপর অষ্টেলিয়ায় খন্ড খন্ড কয়েকটি সনদ নিয়ে সেখানকার প্রথম বাংলাভাষী ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার হিসেবে নিয়োজিত হন। ২০১৫ খ্রী: জাতিসংঘের পরামর্শক হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে কাজ করেন। অষ্টেলিয়া সরকারের দোভাষী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। তিনি ৭টি ভাষায় লিখতে, পড়তে ও বলতে পারদর্শী, এছাড়া তিনি প্রাথমিক কুশল বিনিময়ে আরো ১০/১২ টি ভাষা আয়ত্ব করেন। তিনি সিডনীতে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায়ও নিয়োজিত ছিলেন। আস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একটি গোপনীয় সংস্থায় নিয়োজিত থেকে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর কর্মজীবণ খুবই বিশাল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। তাঁর একমাত্র আইনজীবী ছেলে উপল আমিন অষ্টেলিয়ার এটর্নি ও মেয়ে ইশাবেলা নার্সারী স্কুলের চাইল্ড ট্রেইনার।
ভিডিও ধারণ ও একই সাথে ধারাভায্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর কাজে বা অকাজে অন্তত দুবার বাংলাদেশে গিয়ে থাকলেও আমি দেশের অনেক কিছু থেকে অজানা। আমি ১৯৯১ সন থেকে বাংলাদেশের বাইরে। গত ২৫ বছরে বিশেষ কোনো বিষয় অথবা ঘটন বা অঘটন ছাড়া আমি বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন দেখিনি। বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলোতে নাটক, সিনেমা বা খেলার ধারাভাষ্য দেখাতো বহু দূরের কথা। বাংলাদেশী কোনো টিভি বা চ্যানেল নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই, আমি বাংলাদেশের অনেক টিভি অভিনেতা ও নায়িকাদের চিনি না। দীর্ঘ নয় ঘন্টা পাশাপাশি প্লেনে ওড়ার পর মাত্র নামার আগে জানলাম আমার পাশের বসা সুন্দরী মেয়েটি বাংলাদেশের হিট টিভি নায়িকা। তাতে আমার কোনো আফসোস বা ভাবলাশ ছিলোনা বিন্দুমাত্র। সুতরাং বাংলাদেশের কোনো ধারাভাষ্যকার চৌধুরী শরাফত বা কোন জাফর উল্লাহ আমি তাদের কাউকে চিনি না। কোনোদিন নামও শুনিনি। অথচ আমার অনেক তথাকথিত গুণগ্রাহীদের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে আমি নাকি কাউকে নকল করি। আবারো বলছি আমি ‘বনি আমিন’, আমি এককভাবে আমি নিজেকে নিজে অনুসরণ করি। কাউকে নকল বা অনুসরণ করি না, আমি কক্ষনো কোনো স্ক্রিপ্ট বা প্রস্তুতি নিয়ে কোনো ভিডিও করি না। আমি এই নিয়ে কাউকে আলাদাভাবে আর ব্যাখ্যা দেব না। বলুক যে যা যত মন্দ কথা। আমি জানি পরনিন্দা এবং ঈর্ষা আমাদের বাঙালির অস্থী মজ্জায় মিশে আছে।
Comments are closed.