হাতিয়া জেলা বাস্তবায়ন জরুরী

276

নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত জেলা শহর থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী একটি প্রান্তিক উপজেলা হচ্ছে হাতিয়া। হাতিয়া উপজেলা হচ্ছে নোয়াখালী জেলার একমাত্র উপজেলা যেখানে জেলা শহর, বিভাগীয় শহর ও রাজধানী শহরের সাথে নেই কোন বাস ও ট্রেন সার্ভিস ।

প্রশাসনিক কাজে জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য অত্র এলাকার প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। হাতীয়ার মানুষ তার নিজ উপজেলা থেকে জেলা সদরে যেতে সময় লাগে ৭ ঘন্টার ও বেশী । আর কোন কোন সময় কেটে যায় সারা দিন। কারন তাদের কে জোয়ার বাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।একবিংশ শতাব্দীতে এই যেন এক আদিম সভ্যতা।

আর এখানে প্রকৃতিক বিপর্যয় একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রায় সময়ে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষ করে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষের মূল্যবান কর্মঘন্টা। নৌ-যান সংখ্যা অপ্রতুল থাকায় জেলা শহরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

নোয়াখালী জেলার সবচেয়ে বেশী রেমিটেন্স উপার্জনকারী হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অত্র এলাকায় ব্যাবসা বানিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না এবং গড়ে উঠছেনা শিল্পকারখানাও। জেলা শহর থেকে অপেক্ষাকৃত অনেক দূরত্বে অবস্থান করায় অত্র এলাকাটিকে জেলা করা হলে। অত্রাঞ্চল এর সাড়ে সাত লক্ষ জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং হাতিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

মেহেরপুর জেলা হতে পারলে হাতিয়া কেন জেলা হবেনা? ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মেহেরপুর জেলায় উপজেলা রয়েছে মাত্র ৩টি,ইউনিয়ন রয়েছে ১৮টি এবং গ্রাম রয়েছে মাত্র ২৭৭টি।
অন্যদিকে ৩৫০০ বর্গকিলোমিটার এর বেশী আয়তন বিশিষ্ট হাতিয়া উপজেলা।

নিম্নে হাতিয়ার কিছু ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরতে চাই যার মাধ্যমে হাতিয়া জেলা বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা এবং বাস্তবতা প্রমানিত হবে।অবস্থান: নোয়াখালী জেলা সদর থেকে নৌপথে হাতিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব আনুমানিক প্রায় ৮০ কিলোমিটার এর বেশী ।

হাতিয়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থাঃ
পাকা রাস্তা ১৩০ কি:মি:, অাধা-পাকা রাস্তা ৬০ কি:মি:, কাচা রাস্তা ৬৮৭ কি:মি, ব্রীজ/কালভার্ট ৩৬৮ টি, নদীর সংখ্যা ০৩ টি, জেলা সদর তথা মুল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ।
হাতিয়া উপজেলার শিক্ষা হারঃ
শিক্ষার হার ৬৯%, পুরুষ ৫১%, নারী ৪২%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৬ টি, বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৯ টি, জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ০৭ টি, মোট উচ্চ বিদ্যালয় ৪৫ টি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ০৩ টি, মোট মহাবিদ্যালয় ০৪টি, বালিকা মহাবিদ্যালয় ০১ টি, দাখিল মাদ্রাসা ০৮ টি, অালিম মাদ্রাসা ০৩ টি, কামিল মাদ্রাসা ০১ টি
হাতিয়া উপজেলার ইতিহাসঃ
প্রমত্তা মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির প্রচণ্ড দাপটের মুখে হাতিয়ায় প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার কারণে এক থেকে দেড়শ’ বছরের পুরনো কোনো নিদর্শন অবশিষ্ট নেই। দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি অনেক গবেষক হাতিয়ার ওপর গবেষণা করেছেন। তাদের মধ্যে সুরেশ চন্দ্র দত্ত কিছু যুক্তি দিয়ে হাতিয়ার বয়স অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন।

দক্ষিণবঙ্গের ভূ-ভাগ সৃষ্টির রহস্য নিয়ে তার গবেষণায় তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রতি ১৩৬ থেকে ১৪০ বছর সময়ের মধ্যে এক মাইল স্থলভাগ সৃষ্টি হয় হাতিয়ায়। তার এ তথ্য আমলে নিয়ে হাতিয়ার বর্তমান আয়তনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে হাতিয়ার বয়স সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার বছর বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়ার চৌহদ্দি নিরূপণ করলে দেখা যায়, হাতিয়ার উত্তরে সুধারাম, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে সন্দ্বীপ এবং পশ্চিমে মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলা।

এক সময় সন্দ্বীপের সঙ্গে হাতিয়ার দূরত্ব ছিল খুবই কম। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দূরত্ব এখন ৬০ মাইল ছাড়িয়েছে। ক্রমাগত ভাঙনই এ দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। হাতিয়ার ভাঙা-গড়ার খেলা চতুর্মুখী দোলায় দোদুল্যমান। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে ভাঙছে। আবার দক্ষিণে গড়ছে, পাশাপাশি আবার মূল ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে আশপাশে ছোট-বড় নানান ধরনের চর জেগে উঠছে।

ওয়েব স্টার নামের একটি সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮৯০ সাল থেকে হাতিয়ার আদি ভূখণ্ডের উত্তর ভাগের ভাঙন শুরু হয়। বিরাট আয়তনের জমি নদী ও সাগরের ভাঙনে বিলুপ্ত হলেও একই সময় দ্বীপের উত্তর দিকে হাতিয়ার আয়তন ভাঙনের প্রায় ২ থেকে ৫ গুণ হারে বাড়তে শুরু করে। সেই সময় এ অঞ্চলের জেগে ওঠা চরের যে হিসাব পাওয়া যায় তা হলো : ফেনী নদীর মুখে ৫টি, হাতিয়া দ্বীপের সম্প্রসারণ ১৮টি, হাতিয়া চ্যানেলে ৫টি, মেঘনার বুকে ৩টি ও ডাকাতিয়া নদীর মুখে ৩৫টি চর সৃষ্টির প্রক্রিয়া হাতিয়ার মোট আয়তনকে পরিবৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।

১২০ বছরের ব্যবধানে হিসাব-নিকাশে ঢের পরিবর্তন এসেছে। অনেক চর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, কিছু কিছু আবার ভাঙনের কবলে পড়ে হারিয়ে গেছে। ক্রমাগত ভাঙনের কারণে সঠিক আয়তন নির্ধারণ করা কঠিন হলেও উপজেলা পরিষদের হিসাব মতে হাতিয়ার বর্তমান আয়তন ২১শ’ বর্গকিলোমিটার বলে উল্লেখ আছে। হাতিয়া সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে পড়তে পারেন ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা তিলোত্তমা হাতিয়া ও ইতিহাস’ শিরোনামের গ্রন্থটি।

ইসলাম প্রচারঃ
ইতিহাসে বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার হিসেবে চট্টগ্রামকে ধরা হলেও হাতিয়াতেই ইসলামের সূত্রপাত হয় বলে বিশ্বাস করেন দ্বীপের মানুষেরা। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে এখানে একটি বৃহত্তম জামে মসজিদ গড়ে ওঠে। এটিই ছিল হাতিয়ার ঐতিহাসিক প্রথম জামে মসজিদ। নির্মাণের প্রায় ৮০০ বছর পর ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৮ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মজিদের নকশায় পুরনো সেই মসজিদের আদলে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে এখানে আরেকটি মসজিদ গড়ে তোলা হয়। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মসজিদটি অক্ষত ছিল।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী প্রোগ্রামার,ইউআইটিআরসিই, ব্যানবেইস মো.জহির উদ্দিন।

নারায়নপুর আর কে উচ্চবিদ্যালয়ের কমিটি গঠন,আবু তালেব সদস্য নির্বাচিত

এ সময় বক্তারা আদালতের রায় ও ডাক্তারের চিকিৎসা পত্র বাংলা ভাষায় লিপিবদ্ধ করার জন্য জোরালো দাবি জানান।

চাটখিল কামিল মাদ্রাসায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

অল্পদিনের মধ্যেই এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও চাঁদাবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।

নিজ এলাকায় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন এইচ এম ইব্রাহিম এমপি

মফস্বলে সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম।

মফস্বল সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ – এইচ এম ইব্রাহিম

Comments are closed.