ভাগ্যবদলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায়: চাটখিলের মৃত্যুর মিছিল
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, যাঁরা খুন হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দোকানমালিক ও ব্যবসায়ী।
গেল বছরের শেষ তিন মাসে কমপক্ষে ২৬ বাংলাদেশি খুন হন। জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭ জন বাংলাদেশি খুন হন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসেই চার জন যুবক খুন হন। ফেব্রুয়ারিতে খুন হন পাঁচ জন। এর মধ্যে ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে জোহানেসবার্গের সোয়েটো লোকেশনের এলডেরাডো পার্কের একটি দোকানে নাজমুল হুদা বিপ্লব (২৫) নামে এক প্রবাসীকে গুলি করে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত শনিবার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান ওরফে সায়মন (২০) খুন হন। ওই দিন রাত ৮টার দিকে সায়মনের মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে। সায়মনের স্বজনরা জানান, দেড় বছর আগে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য সাউথ আফ্রিকাতে কাজের সন্ধানে যায় সায়মন।
সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ফ্রিডম পার্ক এলাকায় তার খালুর দোকানে কাজ করতো সায়মন। গত সোমবার সে দোকানে বেশ কয়েকজন নিগ্রো সন্ত্রাসী ডাকাতির উদ্দেশ্যে হানা দেয়। এ সময় তাদের বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা গুলি করে দোকান লুট করে পালিয়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় সায়মনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সয়মন সবার বড়। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সায়মনের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সায়মনের লাশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তার পরিবার দাবি জানান। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার সুযোগ খুব কম। কিন্তু একশ্রেণির দালাল ছয়-সাত লাখ টাকা নিয়ে মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, তানজানিয়া, লাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় লোক পাঠায়। এভাবে যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যান, তাঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জে। তাঁদের বেশির ভাগ দোকান চালান। কিন্তু তাঁরা বৈধ নন। ফলে তাঁদের ব্যাংক হিসাব নেই। এ কারণে নিজেদের কাছেই তাঁরা নগদ টাকা রাখেন। আর ওই টাকা ছিনিয়ে নিতেই এসব হামলা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের কাছে এসব ঘটনার প্রতিকার ও ন্যায়বিচার চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আমিন খান বলেন, এখানে জীবন হারানোর শঙ্কা নিয়ে চলতে হয়। অন্য দেশের কেউ মারা গেলে সে দেশের লোকজন ও এম্বাসি মামলা করে, কিন্তু বাংলাদেশিদের বেলায় কেউ আসে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের অভিযোগ, হত্যাকান্ডের শিকারের পর পুলিশের পক্ষে একটি ইউডি মামলা ছাড়া ভুক্তভোগীর পক্ষে কোনো মামলা হয় না। তাই খুনের ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্তও হয় না। তাই কি কারণে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে তা পুলিশী তদন্তের বাইরে থেকে যায়।
অপরদিকে অন্য কোনো দেশের নাগরিক সেখানে হত্যাকান্ডের শিকার হলে ওই দেশের কমিউনিটি নেতারা সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাত আসামীর নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার চুড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার তদারকি করে যান। এমন কি ওই দেশের অ্যাম্বাসী পর্যন্ত মামলার তদারকির জন্য নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগ করে। বাংলাদেশি প্রবাসীদের বেলায় ঘটে উল্টো ঘটনা। যে কোন এলাকায় কোন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হলে স্থানীয় বাংলাদেশিরা চাঁদা তুলে লাশটা কোনরকমে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
Comments are closed.