নোয়াখালীর হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মহা সংকট
নোয়াখালীতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। অনেকেই শ্বাসকষ্টের সময় অক্সিজেনের অভাবে মারা যান।
করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ৫ থেকে ১০ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা বেশ কঠিন মুহূর্ত রোগীর জন্য। রোগীর অক্সিজেনের ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করে সংকট হলে অক্সিজেন দিতে হবে। অথচ নোয়াখালীর হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও জেলায় করোনারোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এই সংকটের পহর গুনতে হচ্ছে রোগীদের।
এইদিকে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকলেও জেলার ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী কভিড-১৯ হাসপাতাল ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ঘাটতি। পাশাপাশি এখানে নেই কোনো কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা। অন্যদিকে, অক্সিজেন সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্তদের বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন এই দুটি হাসপাতালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলার অধিকাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড-১৯ অস্থায়ী হাসপাতালে দেয়া হয়। এ অবস্থায় যদি কোনো জটিল রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। তবে সেক্ষেত্রে অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে চিকিৎসা সেবা দেওয়া।
ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৪২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চলছে চিকিৎসা, যেখানে অন্তত ১৫০টি সিলিন্ডার প্রয়োজন। এখানে ৮০টি শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৪ জন রোগী। এ হাসপাতালে সর্বমোট ১৪০ জন রোগী ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়েছেন ৯১জন। এছাড়া নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৬০টি। এখানে আইসোলেশনে ২০টি শয্যায় ১৩ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
এ ব্যাপারে ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড-১৯ হাসপাতালের কোঅর্ডিনেটর ডা. নিরুপম দাশ সাংবাদিকদের জানান, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বা স্যাচুরেশন ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলে প্রথমে অল্প মাত্রায় অক্সিজেন দিতে হয়। এতেও পরিস্থিতি উন্নতি না হলে অক্সিজেনের মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়। আমাদের হাসপাতালে হাই-ফ্লোও সেন্ট্রাল অক্সিজেন দরকার হলেও নেই। সিলিন্ডারের অক্সিজেনে রোগীকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তাও ঠিকমতো পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, আমাদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের জন্য অন্তত ৬০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন রয়েছে। অক্সিজেন সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আামাদের কখনো অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট হয় নাই। এখন এ পরিস্থিতিতে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদাপত্র দিয়েছি। আশা করি এলে এই সংকট কেটে যাবে।
অপরদিকে জেলায় নতুন করে আরও ২৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৪০ জন ও করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। রোববার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১১ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুর রহমান।
Comments are closed.