নোয়াখালীর মেয়ে জুয়েনা আজিজের জ্যেষ্ঠ সচিব হওয়ার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

206

৩৩ বছরের কর্মজীবনে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনো বা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) হিসেবে উপজেলা প্রশাসন চালিয়েছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে নীতিনির্ধারণী পদে বসে নিজেই নিয়েছেন সিদ্ধান্ত। আর এখন তিনি জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিবেরও একধাপ ওপরের পদ। একটি মন্ত্রণালয়ের পুরো প্রশাসনিক কাজটি হচ্ছে তাঁর হাত ধরে।

যাঁর কথা বলা হলো, তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জুয়েনা আজিজ। বর্তমানে সরকারের যে কয়জন জ্যেষ্ঠ সচিব আছেন, তাঁদের মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী। নিজের কাজ, মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে এতগুলো স্তর পেরিয়ে আজ জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি পদে এসেছেন।

এই উঁচু পদে আসার ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের পাশাপাশি আরেকজন নারীর অবদানের কথা বড় করে বললেন জুয়েনা আজিজ। তিনি তাঁর স্কুলশিক্ষক মা মুকিমা খাতুন। আবার নিজে চাকরিতে যেমন সফল হয়েছেন, মা হিসেবেও সফল। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে সুবেহ আশফারাহ ব্যারিস্টার। আর ছেলে বায়েজীদ ফারাবী খান মায়ের পথ ধরে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।

নোয়াখালীর মেয়ে জুয়েনা আজিজ বলেন, তাঁর মা সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি ছিলেন খুবই যত্নবান। মায়ের চাওয়া ছিল, পড়াশোনা করে সন্তানেরা যাতে সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। সাত ভাইবোনের (২ বোন, ৫ ভাই) মধ্যে সবার বড় জুয়েনা আজিজ। বললেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা বাবা আজিজুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি করতেন। রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় থাকায় বাবা আমাদের অতটা যত্ন নিতে পারতেন না। ফলে আমাদের ভাইবোনদের পড়াশোনা ও দেখাশোনার কাজটি মূলত মা দেখতেন। তবে বাবাও নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন।’

নোয়াখালীতে স্কুল-কলেজজীবন শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসেন। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন।

চাকরিটা পেয়ে যান স্নাতকোত্তর শেষ করার আগেই। জুয়েনা আজিজ বললেন, ‘যখন স্নাতকোত্তর পড়ছি, তখনই বিসিএস (১৯৮৪ সালের বিজ্ঞাপন) পরীক্ষায় অংশ নিই। প্রথমবারই প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পেয়ে যাই।’ নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ১৯৮৬ সালে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। প্রথমে নারায়ণগঞ্জে সহকারী কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওদিকে পড়াশোনাটা থেমে যায়নি। চাকরিতে থেকেই স্নাতকোত্তর পাস করেন। চাকরিজীবনে বিদেশেও উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর থানা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মাঠপ্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন জুয়েনা আজিজ। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জনপ্রশাসন, ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। এভাবে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়ে ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে সরকারের সচিব হন। প্রথমে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) হন। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। গত জানুয়ারিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। একই মাসে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি পান। বর্তমানে ৭৮ জন সচিবের মধ্যে নারী সচিব আছেন ৭ জন। আর নারী সচিবদের মধ্যে জুয়েনা আজিজই একমাত্র জ্যেষ্ঠ সচিব।

১৯৬১ সালে জন্ম জুয়েনা আজিজের। পারিবারিক জীবন নিয়েও তিনি সুখী। স্বামী এনায়েত হোসেন খান সাংবাদিক। তাঁদের দুই সন্তানও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। জুয়েনা বললেন, ‘ছেলেমেয়েদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামতকেই প্রাধান্য দিয়েছি। যেমন ছেলে যখন প্রথমে গায়ক হতে চাইল, সহযোগিতা করেছি। সব সময় চেয়েছি, ছেলেমেয়েরা যেন আনন্দের সঙ্গে বড় হয়। ক্লাসে প্রথম হওয়া নয়, যেন মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হয়। এ জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও বন্ধুর মতো রেখেছি।’

পড়াশোনা করার সময় চাকরি ও বিয়ে হলেও কখনো বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি। এ জন্য বাবার বাড়ির সহযোগিতা যেমন ছিল, তেমনি স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ি থেকেও সহযোগিতা পেয়েছেন। কর্মজীবী মা হওয়ায় দুই পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এত দূর আসা সম্ভব হতো না।

চাকরি ও পরিবারের ক্ষেত্রে তিনি নিজস্ব একটি নীতি মেনে চলেন। বললেন, ‘আমি কর্মক্ষেত্রকে পরিবারের সঙ্গে মেলাই না। যখন বাড়ি যাই, তখন শতভাগ গৃহিণী বা মা। আবার যখন চাকরিতে থাকি, তখন বাসার কথা মাথায় আনি না।’

বর্তমানে নারীদের চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে বললেন, ‘এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, নারীদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।’ এখন যে নারীরা চাকরিতে আসছেন, তাঁদের প্রতি জুয়েনা আজিজের পরামর্শ হলো, কাজে যত্নশীল হওয়ার বিকল্প নেই। ভালো কাজ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। তাহলে পুরুষ হোক আর নারী হোক, ভালো করবেই।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী প্রোগ্রামার,ইউআইটিআরসিই, ব্যানবেইস মো.জহির উদ্দিন।

নারায়নপুর আর কে উচ্চবিদ্যালয়ের কমিটি গঠন,আবু তালেব সদস্য নির্বাচিত

এ সময় বক্তারা আদালতের রায় ও ডাক্তারের চিকিৎসা পত্র বাংলা ভাষায় লিপিবদ্ধ করার জন্য জোরালো দাবি জানান।

চাটখিল কামিল মাদ্রাসায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

অল্পদিনের মধ্যেই এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও চাঁদাবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।

নিজ এলাকায় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন এইচ এম ইব্রাহিম এমপি

মফস্বলে সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম।

মফস্বল সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ – এইচ এম ইব্রাহিম

Comments are closed.