নোয়াখালীতে ছাত্রকে অধ্যক্ষের নির্যাতন: জামিনে মুক্তি পেয়ে গুম, খুনের হুমকি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জয়নারায়ণপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক দশম শ্রেণির ছাত্র কুরআনে হাফেজকে বাসায় ডেকে নিয়ে মিষ্টির সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে উপর্যুপরি নির্যাতন করে অধ্যক্ষ।
এ ঘটনায় গ্রেফতারের ২৪ দিন পর কারাগার থেকে বেরিয়ে ওই ছাত্রকে অপহরণের চেষ্টা ও মামলা তুলে না নিলে গুম ও খুন করার হুমকি দিয়েছে অধ্যক্ষ।
ভিকটিমকে মসজিদে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ পুলিশের।
জয়নারায়ণপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রের (১৭) সোমবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন, বৃহাস্পতিবার রাতে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু আফসার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার লজিং বাড়ির কাছারিঘরে গিয়ে তাকে অপহরণ করতে নেওয়ার জন্য হামলা চালায়। তার জোরে চিৎকারে আশপাশের লোক বেরিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা হুমকি দেয় যে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা বলাৎকারের মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে তাকে গুম করে খুন করা হবে।
এ ব্যাপারে পর দিন বেগমগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ডায়েরি তদন্তে গিয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা পান। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা কাছারিঘরে না থেকে তাকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে অবস্থান নিতে বলেন এবং সন্ত্রাসীরা হামলা করলে মসজিদের মাইকে পাবলিককে জানাতে পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় ওই অধ্যক্ষ তার মোবাইল ফোনে তার জয়নারায়ণপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র হাফেজকে (১৭) কেন্দুরবাগ এলাকার বাসায় ডেকে নেয়। বাসায় গেলে মিষ্টির সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে তাকে উপর্যুপরি বলাৎকার করে। ওই ছাত্র এ ব্যাপারে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির কাছে অভিযোগ করলে গভর্নিং বডি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠায় এবং এ ব্যাপারে বিচার করতে বললে ভিকটিমের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয় তারা।
পরে এ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তারা মানববন্ধন করলে পুলিশের টনক নড়ে। পুলিশ ওই রাতেই ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং বলাৎকারের মামলা গ্রহণ করে অধ্যক্ষ মওলানা আবু আফসার মো. মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
বর্তমানে অধ্যক্ষ জামিন বাতিল করে পুনরায় কারাগারে পাঠানোর দাবিতে প্রায় প্রতিদিন মাদ্রাসাসহ নোয়াখালী প্রেসক্লাব, চৌমুহনী প্রেসক্লাব, জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এদিকে ভিকটিমের পিতা আলাউদ্দিন জানায়, অধ্যক্ষের লোক প্রায় তার বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তছনছ করে দেবে। তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ থানার ওসি জায়েদুল হক রনি বলেন, ওই ভিকটিমের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই, পুলিশ এদিকে সবসময় নজর রাখছে। সূত্র: যুগান্তর
Comments are closed.