চট্টগ্রামের ক্লিনিকে নোয়াখালীর দম্পতির নবজাতক কন্যা চুরি, পরিবর্তে দিল ছেলের লাশ!
শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতক কন্যাকে শনিবার ভর্তি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর এক ক্লিনিকে।
মঙ্গলবার তাকে মৃত ঘোষণা করে প্যাকেটে করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তুলে দেয় পরিবারের হাতে। বাড়িতে নিয়ে দাফনের জন্য গোসল করাতে গিয়ে পরিবারের লোকজন দেখেনÑ নবজাতক ছেলে।
পরিবারের লোকজন ফিরে আসেন ক্লিনিকে। প্রথমে অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। রাতভর দেন-দরবারের পর বুধবার সকালে জীবন্ত কন্যাশিশুকে ফেরত দিয়েছে তারা।
নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার ওই ক্লিনিকের নাম ‘চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক’। এ নিয়ে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শিশুটিকে এখন ভিন্ন একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নোয়াখালীর মাইজদী এলাকার মহিউদ্দিন ও গৃহিণী রোকসানা আকতারের ঘরে জন্ম নিয়েছিল ওই নবজাতক।
রোকসানা আকতার জানান, ১৪ এপ্রিল আমি কন্যা সন্তানের মা হই। জন্মের পরপরই বাচ্চাটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাকে প্রথমে নোয়াখালীর মা-মণি হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করে। বাচ্চাটিকে প্রথমে চমেক হাসপাতালে নেই। পরে চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করাই।
রোকসানা বলেন, বাচ্চাটিকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ। প্যাকেট করে আমার হাতে তুলে দেয়। মাইজদীতে গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। গোসল দেয়ার সময় দেখতে পাইÑ এটা একটা ছেলের লাশ। তার মানে আমার মেয়েকে তারা দেয়নি। এতে হতবাক হয়ে আমরা চট্টগ্রামে ফিরে আসি। ক্লিনিকে গেলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে রাতে পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করি।
রোকসানা আরও বলেন, মৃত শিশুটি নিয়ে আমরা সারারাত অ্যাম্বুলেন্সে বসেছিলাম থানার সামনে। রাতভর দেন-দরবার করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নমনীয় হয়। ভোরে আমাকে জানানো হয় আমার মেয়ে পাওয়া গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় (বুধবার) চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকের ম্যানেজার শওকত আলম ও কর্মকর্তা মিজানুর রহমান গুরুতর অসুস্থ মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেন। আমরাও মৃত নবজাতকটি তাদের ফেরত দেই।
এসময় ক্লিনিকের ম্যানেজার শওকত আলম বিষয়টি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। রোকসানা বলেন, বাচ্চাটাকে পেয়ে যেন নতুন করে জীবন পেলাম।
শিশুটির চাচা আলমগীর হিরু অভিযোগ করেন, ‘চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের বাচ্চা অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। পরে আমাদের চাপের মুখে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।’
পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে নবজাতক নিয়ে এমন কান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, ‘ক্লিনিকের কর্মচারীদের ভুলের কারণে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিটি শিশুর সঙ্গে ট্যাগ লাগানো থাকে। এক নবজাতকের ট্যাগ অন্য নবজাতকের কাছে দেয়াতে এ সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।’ বাচ্চা বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন ডা. রেজা।
তবে সেই মৃত নবজাতকের পরিবারের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি জানাতে পারেননি।
অসুস্থ কন্যাশিশুটিকে এখন নগরীর আরেকটি বেসরকারি ‘রয়েল হাসপাতালে’ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানে আইসিইউতে নবজাতককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ডা. বিধান রায় চৌধুরী।
তিনি বলেন, নবজাতকটি গুরুতর অসুস্থ। সুস্থ হতে সময় লাগবে। জšে§র পর ব্রেনে অক্সিজেন পৌঁছেনি। খিঁচুনি ও ইনফেকশন আছে। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়ার চিন্তা করছি।
Comments are closed.