ঘুর্ণিঝড় গোর্কির ক্ষত আজো শুকায়নি, নিহতদের স্মরণ
আজো শুকায় নিয়ে ঘুর্ণণিঝড় গোর্কির ক্ষত। নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ১৯৭০ সালে প্রলঙ্কারী ঘূর্নিঝড় গোর্কিতে নিহতদের ম্মরণ করছে নোয়াখালীর উপকূলবাসী। সেই সাথে ১২ নভেম্বরকে সরকারী ভাবে উপকূল দিবস ঘোষনারও দাবী জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। সোমবার (১২ নভেম্বর) দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২ টা. ১মিনিটে জেলার উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া ও সুবর্নচরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহতদের ম্মরনে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। এছাড়াও দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭০ সালের এই দিনে শতাব্দীর সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বস গোর্কিতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল নোয়াখালীর উপকূলীয়াঞ্চল। সমুদ্রের পানিতে ডুবে গিয়েছিলো দক্ষিণ উপকূলের বিশাল জনপদ। শুধু নোয়াখালীতে প্রাণহানি ঘটেছিল প্রায় ৩ লাখ মানুষের। মারা গিয়েছিল লাখ লাখ গবাদিপশু ও জীবজন্তু। ২ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের ক্ষতি হয় প্রলয়ঙ্ককরী ঘূর্ণিঝড়ে। নোয়াখালী উপকূলের কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্নচর ও হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকার অবকাঠামো ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়। ধ্বংসের তান্ডবলীলায় এ অঞ্চল পরিণত হয়েছিল ম্রত্যুপুরীতে। স্বজন হারানো সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আজো যারা বেঁচে আছেন অনেকে। সে দিনের সেই বিভীষিকাময় দিনটি মনে পড়তেই আঁতকে ওঠেন তারা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো নোয়াখালীর উপকূল।
’৭০-এর ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতী আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রাাশ করে গত বছরের (২০১৭) ১৮ মে। এ পযন্ড রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ছিল রমজান মাসের শেষ সপ্তাহের একটি দিন। রাত ৮টার পর ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। রাত সাড়ে ১০টায় বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ থেকে ১৭০ মাইল বেগে আঘাত হানে জনপদে। রাত ১টা পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার-৩ মিনিট স্থিতি ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার-১ মিনিট স্থিতি।
ওই সময় চরাঞ্চলে রেডিও না থাকায় সাধারণ মানুয় জানতে পারেনি প্রলয়ের আগাম বার্তা। তখন উপকূলীয় এলাকায় ছিল না কোনো সাইক্লোন শেল্টার, ছিল না বেড়িবাঁধ। যে কারণে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি বেশি হয়েছে।
ঝড়ের তীব্রতা কমে যাওয়ার পর শুরু হয় স্বজনদের খোঁজাখুঁজি। কারো বাবা নেই, মা নেই। আবার কারো নেই স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী। গাছের ডালে অথবা বাড়িঘরের খুঁটির সাথে ঝুলে থাকে স্বজনদের লাশ। যে দিকে চোখ যায় শুধু লাশ আর লাশ। তৎকালীন উপকূলীয় এলাকায় এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যায়নি যাদের কোনো প্রিয়জন হারায়নি। দুই-তিন দিন পরে উপকূলের সর্বত্র ভাসতে থাকে মানুষ আর গবাদিপশুর লাশ। আঁকড়ে ধরা মা ও শিশুর লাশের ছবি আজো বেদনাবিধুর আবহ সৃষ্টি করে।
১২ নভেম্বর জাতীয় উপকূলীয় দিবস ঘোষণার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের (উবা), নোয়াখালী ইউথ ফোরামসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে এই দিনে নিহতদের ম্মরণ করা হয়। দিনটিকে জাতীয় ভাবে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষনা করতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয়েছে। সরকারী ভাবে এখনো ঘোষনা না আসলেও বেসরকারী ভাবে স্থানীয়রা দিবসটি পালন করছে।
উপকূল বাঁচাও আন্দোলন(উবা)’র সমন্বায়ক সাংবাদিক শাহেদ শফিক জানান, আমাদের দেশের অনেকেই জানেননা সেদিন মেঘনা পাড়ের উপকূলে কি ঘটেছিলো। শুরু যান স্বজন হারিয়েছে সেই জানে সেদিনের ব্যাথা।
নোয়াখালী ইউথ ফোরামের আহবায়ক হামিদ রনি জানান, সেদিন এতোগুলো মানুষ মারা গেলো অথচ আমাদের নতুন প্রজম্ম জানেইনা। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ১২ নভেম্বরের ভয়াল চিত্রটি তুলে ধরছি। ১২ নভেম্বরে নিহতদের ম্মরণে সরকারের কাছে দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষনার দাবী জানাই।
Comments are closed.