গাণিতিক সমীক্ষায় শবে কদর
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের ‘সুরা কদর’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘কদরের এক রাতের ফজিলত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা কদর : ৩)। এখানে ‘হাজার মাস’ বলতে কত হাজার মাস, আল্লাহতায়ালা নির্দিষ্ট করে বলেননি। এটা এক হাজার মাসও হতে পারে, কয়েক হাজার মাসও হতে পারে। আবার দয়াময় আল্লাহতায়ালা চাইলে অগণিত, অসংখ্য হাজার মাসও হতে পারে।
ধরে নিলাম, মাত্র এক হাজার মাস। তাহলে, গাণিতিক হিসেবে তা দাঁড়ায় (১০০০÷১২)=৮৩.৩৩ বছর। অর্থাৎ ৮৩ বছর ৩ মাসের অধিক। একজন ব্যক্তি সারা জীবনে যদি কমপক্ষে ৩০টি শবে কদর পেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি (৮৩.৩৩×৩০)=২৪৯৯.৯ বছর, অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইবাদত করার ফজিলত পাবেন। শেষ নবীর উম্মতদের কম হায়াতের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দেওয়া এ এক মহামূল্যবান উপহার।
তবে সারা বছর আল্লাহকে ভুলে থাকলাম, নামাজ-রোজা করলাম না, আল্লাহর নাফরমানি, শিরকি করলাম, ইসলামি আইন মানলাম না, শুধু শবে কদর নিয়ে মাতামাতি করলাম। এতে আল্লাহতায়ালা কতটুকু রাজিখুশি হবেন, ভাবার বিষয়। তবে দয়াময় আল্লাহ চাইলে কবুল করতেও পারেন। তাই শবে কদরে বেশি বেশি নফল নামাজ, দোয়া-ইস্তিগফার, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আকার এবং দান-সদকায় মনোযোগী হওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করা দরকার যে, জীবনে কোনো দিন আর গোনাহে লিপ্ত হব না। আল্লাহর নাফরমানি করব না।
শবে কদর শুধু ২৬ রমজান দিবাগত রাত নয়; যেমনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পাক-ভারত উপমহাদেশে উদযাপিত হয়। সাতাশ তারিখেই শবে কদর হবে, হাদিসের ভাষ্যমতে এটা নিশ্চিত নয়। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবগত করার জন্য বেরিয়েছিলেন। তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল। ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখ) ভুলিয়ে দেওয়া হয়। হতে পারে এর মধ্যে সবার কল্যাণ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (রমজানের শেষ দশ দিনের) নবম (২৯ তারিখ), সপ্তম (২৭ তারিখ) ও পঞ্চম (২৫ তারিখ) রাতে তা তালাশ করো।’ (বোখারি : ২০২৩)।
তাই এ রাতে ৮৩ বছরের অধিক ফজিলত হাসিলের জন্য আমরা মাত্র পাঁচটি রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতে পারি না? আল্লাহতায়ালা আমাদের শবে কদরের গুরুত্ব বুঝে বেশি বেশি ইবাদতে কাটানোর তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments are closed.