গর্ভে কন্যা সন্তান শুনে স্ত্রীকে তালাক
লক্ষ্মীপুরে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে শাহনাজ আক্তার স্বপ্না নামে এক গৃহবধূর গর্ভে কন্যা সন্তান জেনে তাকে অমানবিক নির্যাতন করে মৌখিকভাবে তালাক দিয়েছে তার স্বামী আলাউদ্দিন রিপন (৩২)। সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের জাগিরদার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ স্বপ্না। এরআগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গৃহবধূ স্বপ্না বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে তার স্বামী আলাউদ্দিন রিপন, দেবর মাইন উদ্দিন ছোটন, শ্বশুর শাহাবুদ্দিন ও শাশুড়ি জাহানারা বেগমকে আসামি করা হয়। আসামিরা সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের জাগিরদার বাড়ির বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর পারিবারিকভাবে স্বপ্নাকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন প্রবাস ফেরত যুবক আলাউদ্দিন রিপন। বিয়ের দেনমোহর ৬ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২ লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র উপঢৌকন দেন স্বপ্নার বাবা। কিন্তু কয়েক মাস পর থেকেই স্বপ্নার সংসারে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়।
গৃহবধূ শাহনাজ আক্তার স্বপ্না জানান, তার স্বামী আলাউদ্দিন রিপন তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না পেয়ে বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন শুরু করেন। এতে রিপনের ছোট ভাই মাইন উদ্দিন ছোটন, বাবা শাহাবুদ্দিন ও মা জাহানারা বেগম জড়িত রয়েছে। এরই মধ্যে গৃহবধূ স্বপ্না অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। সম্প্রতি আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জানা যায় তার গর্ভে কন্যা সন্তান রয়েছে। এ বিষয়টি জানতে পেরে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বপ্নাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে তার গর্ভের শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালায় রিপন। এরপর বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৭নং ওয়ার্ড) মিজানুর রহমান মিলুর সহযোগিতায় টানা ৮দিন তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যেন স্বপ্না আইনের আশ্রয় নিতে না পারে। পরে খবর পেয়ে স্বপ্নার স্বজনরা ছুটে গিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে এবং লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত আলাউদ্দিন রিপনসহ সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ স্বপ্নার মা-বাবাসহ স্বজনরা।
অন্যদিকে গর্ভে কন্যা সন্তান জেনে স্ত্রীকে নির্যাতন ও যৌতুক দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আলাউদ্দিন রিপন। তিনি মুঠোফোনে জানান, পারিবারিক কলহের জেরে রাগের মাথায় স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দিলেও পরে মসজিদের ইমামের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে নেন।
এবিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিলুর বক্তব্য জানা যায়নি।তবে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান মিয়া জানান, অভিযোগের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Comments are closed.