৪৮ বছরেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পুলিশ পরিবারের ভোগান্তি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্তরের ১৫ই জুলাই চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় চর ভৌরবীসহ বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধ করি। সৈয়দ আহাম্মেদ আবেদ মুনসুর অধিনায়কের নেতৃত্বে সেদিনই জয়ের পতাকা ওড়ানো হাইমচর এবং হানাদারমুক্ত হয়। সেই থেকে গত ৪৮ বছরেও পাননি অসুস্থ ক্যান্সার আক্রান্ত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শ্রী কার্তিক সরকার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। শ্রী কার্তিক সরকারের বাড়ী চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলা চর ভৌরবী গ্রামের। মৃত বাবা কুমুদ বন্ধু সরকার, মৃত মা বকুল বালা সরকার, এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাই-বোনের মধ্যে কার্তিক সরকার ছিলেন সবার বড়। আমার পূর্বেল ঠিকানা চাঁদপুরের চরভৈরবী উপজেলার টুমচর গ্রামের নতুন বাড়ী ছিল। বর্তমানে আমি ল²ীপুরের রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ড পেওদা বাড়ীতে বসবাস করছি। প্রায় ৮ বছর আগে ল²ীপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহন করি।
কার্তিক সরকার বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর গত বছর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দেওয়া হয়। যার (নম্বর- )। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পেতে আবারও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চাঁদপুর মুক্তিযোদ্ধা কার্যলয়ের মাধ্যমে আবেদন করেছি।’ যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর আহবানে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করি এবং অবসর হয়ে অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছি। (পুলিশ সদস্য নং-বি ৪৬, পি ১২, ২২, রায়। আমার সাথে মতিউর রহমান (লাল মুক্তি বার্তা নং ০২০৫০৭০০৮৭), নুরুল আমিন সর্দার (লাল মুক্তি বার্তা নং-০২০৫০৭০০৪৭) ও প্রনব কুমার সরকার (লাল মুক্তি বার্তা নং ০২০৫০৭০০৪৪) এক সঙ্গে যুদ্ধ করেছি।
একাত্তরে সৈয়দ আবেদ মুনসুর অধিকায়কের নেতৃত্বে প্লাটুন কমান্ডার মতিউর রহমানের মাধ্যমে দুই নং সেক্টর বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ঢাকা রেসকোর্স বঙ্গবন্ধু নিকট অস্ত্র জমা দেই। চর ভৌরবী চরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ফ্রি নট, ফ্রি রাইফেল, হেন্ড গ্রেনেডে প্রশিক্ষন গ্রহন করি।
হাইমচর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ খোকন জানান, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা কার্তিক সরকার এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত না করা অত্যান্ত পীড়াদায়ক। এতে তাঁর পরিবার মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া বিশেষ আর্থিক সুবিধা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওই যুদ্ধে কার্তিক সরকার ও স্বাধীনতা ও দেশের জন্য অবদান রয়েছে। আমাদের কাছে তার স্ত্রী এসেছেন। আমরাও মুক্তিযোদ্ধ তালিকায় কার্তিক সরকারের নাম দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
মুক্তিযোদ্ধা কার্তিক সরকারের স্ত্রী বিভা সরকার (৫৮) বলেন, আমার স্বামী চরভৈরবী, হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। অথচ যারা যুদ্ধ করেনি এলাকার একাধিক ব্যক্তি সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধাতো পাচ্ছেই সাথে তাদের সন্তানরাও সুবিধা ভোগ করছেন। স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকভুক্ত করতে কমান্ডারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছি। সবাই টাকা চায়। টাকা দিলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নাম হবে ও গেজেটও প্রকাশ হবে বলে আশ^াস দিচ্ছেন। আমি চাই মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার স্বামীকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি, তালিকাভুক্তিও গেজেট প্রকাশ করবেন। আমার অসুস্থ্য ক্যান্সার রোগাক্রান্ত স্বামীর খরচ চালাতে খুব হিমসিম খাচ্ছি। তার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত ছেলে ও ছেলের বউ’র চাকুরীর জন্য ধারে ধারে ঘুরছি।
Comments are closed.