হাতিয়া উপজেলায় ৩১ পদের মধ্যে ডাক্তার আছেন তিনজন
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ ৩১টি। তবে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। তারাও আসেন ইচ্ছামতো। সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টার আগে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। গত ২৮ জানুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনজনের একজনও হাসপাতালে প্রবেশ করেননি। অথচ বহির্বিভাগে টিকিট কেটে দেড়-দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন রোগীরা। আবার ২টা বাজতে না বাজতেই তা চিকিৎসকশূন্য হয়ে যায়। এভাবেই দিনের পর দিন কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চারদিকে পানিবেষ্টিত এ জনপদের বাসিন্দারা।
ডাক্তারের জন্য অপেক্ষমাণ রোগীরা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১০টার আগে হাসপাতালে বসেন না চিকিৎসকরা। এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিম উদ্দিন তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তারপর আসেন ডা. খাদিজা বেগম। আরেকজন ডা. জাসেম ফারহান নাইট ডিউটি করায় আসেননি।
১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৬ লাখের বেশি মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসাস্থল হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের ইচ্ছামতো আসা-যাওয়া করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন অভিযোগ করলেন, হাসপাতালে বসেই অবৈধ উপার্জনের পথ খুলে বসেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিম উদ্দিন। অফিস চলাকালীন সরকারি অফিসে বসেই রোগীপ্রতি ৩০০ টাকা নিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন তিনি। এই অবৈধ কাজে তাকে সাহায্য করে তার কার্যালয়ের এক অফিস সহায়ক (এমএলএসএস)।
রোগীদের অভিযোগ শুনে অনুসন্ধান করে জানা গেল, এ হাসপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে একজনও নেই। কারও একটু জটিল রোগ হলে বা লক্ষণ দেখা দিলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়া দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। হাতিয়াবাসী দীর্ঘদিন এ বঞ্চনার শিকার।
নানা অনিয়ম ও অভিযোগ বিষয়ে ইউএইচএফপিও নাজিম উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকের বেশির ভাগ পদ শূন্য। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আর যারা আসেন, তারাও থাকতে চান না। চাকরি বাঁচাতে অনেকে প্রথমে এখানে যোগদান করলেও তদবির করে শহরে চলে যান।
নিজ কার্যালয়ে বসে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে ডা. নাজিম বলেন, রোগীরা মাঝেমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট তাকে দেখাতে আসে।
সুবর্ণচর উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্স :৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ৩১টি পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র আটজন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে ২৯ জানুয়ারি দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন। তারা হচ্ছেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. মাছুম বিল্লাহ ও গাইনির ড. শিরিন সুলতানা।
এ বিষয়ে ইউএইচএফপিও ডা. হাসিনা ইসলাম বলেন, অনুপস্থিত দুই চিকিৎসক ছুটিতে রয়েছেন। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন না।
Comments are closed.