হাতিয়ার বন্দর সম্ভাবনা

220

সমুদ্র সীমা জয়ের পর ব্লু ইকোনমির বিষয়টি দ্রুত সামনে আসে। সরকার এ বিষয়ে বসে নেই। জাপানের সাথে ব্লু ইকোনমি প্রসারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এবং কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বানিজ্যির দ্রুত প্রসারে ব্লু ইকোনমির বিকল্প নাই। সারা পৃথিবী বিশেষ করে জাপান, নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুর তাদের বানিজ্যের ৮০% আয় করে বন্দর সুবিধা ব্যবহার করে। দেশেন সুষম ও টেকসই উন্নয়নে বন্দরের উন্নয়নের বিকল্প নাই। বন্দরকে কেন্দ্র করে বহু মুখী অবকাঠামোগত ও পরিবেশগত উন্নয়নই পারে ব্লু ইকোনমির ধারনাকে বাস্তব রুপ দিতে। তাই দেশের পুরো উপকূলটা যেন বিধাতা প্রদত্ত প্রাকৃতিক বন্দর। বাংলাদেশে নদীগুলি না থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমরা পদ্মা সেতুর জন্যে ৫৩,০০০ টনের জাহাজে পাথর এনে খালাশ করতে পারতাম না। ব্রিটিশরা যে এই এলাকার maritime potential উপলব্ধি করেছিল, এই বড় আকৃতির জাহাজগুলিও বাংলাদেশে খালাশ করা যাচ্ছে। ডীপ সী পোর্ট যদি আমাদের না-ই থাকবে, তাহলে এত্তোবড় জাহাজ আমরা কি করে খালাশ করলাম?? মালামাল খালাশ করতে আমাদের জেটি লাগেনা, এটা আমাদের নদী সম্পদের প্রাচুর্য্যের কারণে, বন্দরের অসুবিধার কারণে নয়। অন্য দেশের এই সুবিধা নেই বলে আমরা কি আমাদের এই সুবিধাকে unfair advantage মনে করবো??
টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব উপকূল হতে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। সম্ভব এ উপকূলীয় অঞ্চল সুবিধাকে ব্যবহার করে অর্থনীতির চাকা সচল করতে। দেশের বেকারত্ব দূরের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান ও হ্রাস পাবে সামাজিক অস্হিরতা। সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে পুরো দেশ। নানা রকমের খাল ও নদী নালার মিলন স্হল হল এ উপকূলীয় অঞ্চল। এখানে সমুদ্রের নোনা জল হল অর্থনীতির তরল সম্পদ।এ নোনা জলে মিশিয়ে আছে নানা রকমের মাছ, বালি, রত্ন, গ্যাস ও শিল্পের কাঁচামাল।কিন্তু এসব সম্পদ আজও ব্যবহার উপযোগী করা হয়নি কিংবা তার কোন পরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়।সম্প্রতি সময়ে পর্যটন আকর্ষনে হাতিয়ার রোডকে সোনাপুর হতে বয়ারচর পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, এছাড়াও স্বর্নদ্বীপ হল এশিয়ার বৃহত্তর সেনা ক্যান্টমেন্ট।এ দ্বীপকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ অঞ্চলকে বাংলার সিঙ্গাপুর হিসেবে বলেছেন।ভোলায় নৌ বাহিনীর ক্যাম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাতিয়ার অবস্থানটা হল এমন যেখান থেকে সহজে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, সুন্দরবন, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী,সিলেট, ঢাকাতে ও রাজশাহী নৌ পথে আসা যাওয়া করা যাবে।এতে করে চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা ও সোনাদিয়া বন্দরের সাথে কম সময়ে যোগাযোগ করা যাবে।বড় বড় জাহাজ গুলো এমনিতে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করে, লাইটার জাহাজ বা কার্গো জাহাজে করে তা লোড আনলোড করতে হয়।হাতিয়াতে (বয়ারচরে) বন্দর হলে এ লোড ও আনলোড খুব সহজে করা যাবর কেননা হাতিয়ার নদীতে পানির গভীরতা অনেক বেশি তাই লোড আনলোডের জন্য জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হবেনা।ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও মংলা ইত্যাদির দূরত্ব কমবে।রাস্হায় অহেতুক জ্যাম কমবে, হ্রাস পাবে জ্বালানি, পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে ও হ্রাস পাবে গাড়ির হর্ন।এতে সময় ও টাকা সেভ হবে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ পণ্যই (প্রায় তিন-চতুর্থাংশ) ওঠানামা করা হয় বহির্নোঙ্গরে; অর্থাৎ সমুদ্রের মাঝখানে। বড় জাহাজ (৫০,০০০টন বা তারও বেশি) সেখানে আসার পরে নোঙ্গর করে। এরপর ছোট জাহাজ (৫০০টন থেকে ২,০০০ টন পর্যন্ত হয়), যেগুলিকে লাইটার জাহাজ বলে, সেগুলি বড় জাহাজের পাশে এসে ভিড়ে। তখন কোন একটা পদ্ধতি করে (পণ্যের ধরণের উপরে নির্ভর করে) সেই পণ্য ছোট লাইটার জাহাজে খালাশ করা হয়। লাইটার জাহাজ তখন হয় চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দরে মাল খালাশ করে অথবা নদীপথ ব্যবহার করে পণ্যের ব্যবহারকারীর কাছে (ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, বাঘাবাড়ি, চাঁদপুর, নোয়াপাড়া, গোপালগঞ্জ, আশুগঞ্জ, এবং অন্যান্য স্থানে) সরাসরি পোঁছে যায়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই লাইটার জাহাজের চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দরের চেহারাও দেখা লাগে না। নদীপথে বড় জাহাজের মালামাল খালাশ করে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানো খুবই সহজ একটা পদ্ধতি। বাংলাদেশে এরকম হাজার খানেক লাইটার জাহাজ রয়েছে। তবে এই পদ্ধতি সেসব দেশেই কাজ করবে যেখানে সমুদ্র থেকে নদীর মাধ্যমে কারখানা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানো যাবে। এক্ষেত্রে নাব্য নদী থাকলেই শুধু হবে না, নদীগুলি এমনমুখী হতে হবে, যাতে নদী দেশের অভ্যন্তরে মূল শিল্পাঞ্চলগুলিকে সমুদ্রের সাথে সরাসরি জুড়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের নদীগুলি এই দিক থেকে বিশ্বসেরা; সমুদ্র থেকে একেবারে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো করে সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। পৃথিবীর সবচাইতে বেশি নাব্য নদীপথ রয়েছে রাশিয়াতে। কিন্তু রাশিয়ার নদীগুলির একটিও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিকে সমুদ্রের সাথে যুক্ত করেনা। নদী তো মনুষ্য-সৃষ্ট জিনিস নয় – সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জিনিস; রাশিয়া সেটা পায়নি। তাই সবচাইতে বিশাল (১ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি; যেখানে বাংলাদেশে ৩ থেকে ৬ হাজার কিলোমিটার) নৌপথ থাকা সত্ত্বেও সেটা তাদের কাজে লাগে না। এখন এভাবে কিন্তু সকল পণ্য খালাশ করা সম্ভব নয়। আবার অনেক পণ্যই খালাশ করা সম্ভব।
ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান সহ এশিয়ার অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতি বদলে দিয়েছে।আমরা মনে করি সরকার এ সুবিধা ব্যবহার করে দেশেন অর্থনীতি বদলে দেবে।হাতিয়ার এ চ্যানেলটি বহু আগে থেকে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহ্রত হচ্ছে পর্তুগিজ আমল থেকে।দেশের মাঝ ভাগ হওয়াতে বঙ্গোপসাগরে থেকে এ রুট খুবই আকর্ষণীয়। দেশের অন্যান্য বন্দর গুলো যেমন দেশের এক প্রান্তীয় সীমানায় অবস্হিত হাতিয়ারটি তেমনটা নয় তাই অন্যসব বন্দর হতে পুরো দেশে পন্য সরবারহ সহজে করতে না পারলেও এখান থেকে সহজে তা করা সম্ভব। আমাদের আমদানি পণ্যের চার ভাগের তিন ভাগ পণ্যই বাল্ক পণ্য, যা কিনা সমুদ্রের মাঝখানে লাইটার জাহাজে খালাশ করা যায়। ২০১৫-১৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টন পণ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে এর মাঝে যেসব পণ্য পরে – সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল (প্রায় ২৮%), জ্বালানি তেল (১১%-এর উপরে), গম (৭%), কয়লা (৪%), ঢেউটিনের কাঁচামাল স্টিল কয়েল (৪%), ভোজ্যতেল (৩%) – এগুলি মিলে প্রায় ৫০%-এর মতো পণ্য। এর বাইরে রয়েছে চাল, ডাল, পাথর, কেমিক্যাল, লবণ, অপরিশোধিত চিনি, তুলা, রাসায়নিক সার, স্ক্র্যাপ লোহা – এগুলির সবগুলিই ৫ লক্ষ টন থেকে ১০ লক্ষ টনের কম না, যদিও আলাদাভাবে শতাংশের হিসেবে খুব বড় কিছু নয়। এর বাইরে স্ক্র্যাপ জাহাজ রয়েছে, যেগুলি চট্টগ্রাম বন্দরে না গিয়ে একবারে সীতাকুন্ডে সমুদ্রতটে উঠিয়ে ফেলা হয়; এরকম জাহাজ থেকে আসে প্রায় ৩০ লক্ষ টন লোহা, যা উপরের হিসেবের বাইরে। এই বাল্ক পণ্যগুলির কিছু আবার জাহাজ জেটিতে এনে ক্রেনের মাধ্যমে খালাশ করা হয় – যেমন স্ক্র্যাপ লোহা। তবে বেশিরভাগ বাল্কই খালাশ হয় সমুদ্রের মাঝে। আর ইউরোপের জাহাজের বাজারে মন্দার পর থেকে এই খালাশ করা লাইটার জাহাজই এখন আমাদের জাহাজ নির্মান শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগামী কয়েক বছরের মাঝে এই হাজার খানেক লাইটার জাহাজ প্রতিস্থাপন ছাড়াও নতুন ধরনের অনেক জাহাজ আমাদের তৈরি করতে হচ্ছে, যা কিনা আমদের ‘ব্লু ইকনমি’ এবং ‘ম্যারিটাইম নেশন’-এর ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে বন্দর হলে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে যাবে।রেললাইন, নান রকমের ভারি শিল্প যেমন সার শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, লবন শিল্প, পানি শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ নির্মান ও মেরামত শিল্প, ওষধ ও পোশাক শিল্প গড়ে উঠবে।এছাড়াও নানা রকমের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠবে।কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং স্থিতিশীল ও সুষম উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।পর্যটন ও ব্লু ইকোনমির ভিত্তিতে ইপিজেড় হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহুগুনে। এতে হাতিয়াও জেলা হবে সহজে।
তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট অবলম্বনে

আরও পড়ুন

নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী প্রোগ্রামার,ইউআইটিআরসিই, ব্যানবেইস মো.জহির উদ্দিন।

নারায়নপুর আর কে উচ্চবিদ্যালয়ের কমিটি গঠন,আবু তালেব সদস্য নির্বাচিত

এ সময় বক্তারা আদালতের রায় ও ডাক্তারের চিকিৎসা পত্র বাংলা ভাষায় লিপিবদ্ধ করার জন্য জোরালো দাবি জানান।

চাটখিল কামিল মাদ্রাসায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

অল্পদিনের মধ্যেই এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও চাঁদাবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।

নিজ এলাকায় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন এইচ এম ইব্রাহিম এমপি

মফস্বলে সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম।

মফস্বল সাংবাদিকতা করা একটা চ্যালেঞ্জ – এইচ এম ইব্রাহিম

Comments are closed.