শীতে বাড়ে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট
নিউমোনিয়া বলতে ফুসফুসের সংক্রমণকে বুঝায়। বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়া অথবা জীবাণু সংক্রমণ হওয়া থেকে একটু বেশি আকারের সংক্রমণকেই নিউমোনিয়া বলে। শীতের এ সময়ে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। নিউমোনিয়া সংক্রমণ বিভিন্ন ভাবে হতে পারে।
যেমন : নিউমোকক্কাস বা স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু থেকে। ক্লেবসিলো নিউমোনি, স্টেফাইলোকক্কাস, হেমোফাইলাস দ্বারাও সংক্রমণ হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বাদে ভাইরাস দিয়েও সংক্রমণ হতে পারে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে নিউমোনিয়া একটি বড় ধরনের রোগ। এটা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি সঠিক চিকিৎসা দেওয়া না হয় তবে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। যে কোনো মানুষের নিউমোকক্কাস রোগ হতে পারে। তবে যাদের ফুসফুস, হৃদপণ্ড, কিডনির অসুখ রয়েছে এবং যাদের বয়স ৫০ এর ঊর্ধ্বে অথবা যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং এর সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তাদের এ ব্যাধি এবং ব্যাধিজনিত জটিলতা হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি থাকে। সরাসরি হাঁচি কিংবা কাশির মাধ্যমে নিউমোকক্কাস জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। তবে যারা এই জীবাণু বহন করে তারা যে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বে তা কিন্তু নয়।
তাই আপাতত সুস্থ দেহ মানুষের কাছ থেকেও রোগটি ছড়াতে পারে। নিউমোনিয়া হলে জ্বর থাকে, দেহের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়, সঙ্গে কাশি থাকে। কাশির সঙ্গে কফ বের হয় এবং কফের সঙ্গে রক্তও থাকতে পারে অনেকটা মরিচা রংয়ের। কাশি দিলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া ক্ষুধা কমে যায় এবং পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে দেখা যায়। বয়স্ক রোগীদের বেলায় জ্বর খুব একটা বেশি নাও থাকতে পারে। যারা প্রবীণ তাদের বেলায় ঋতু পরিবর্তনের সময় নিউমোনিয়া হতে বেশি দেখা যায়। কিন্তু কিছু নিউমোনিয়া দেখা যায় যাকে আমরা হসপিটাল একোয়ার্ড নিউমোনিয়া বলি। আবার যদি কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে এবং হাসপাতালে যে জীবাণু থাকে সেসব জীবাণুর সংস্পর্শে থাকার কারণে রোগীদের হসপিটাল একোয়ার্ড নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। তাই রোগ নির্ণয়ের আগে কোনটি হসপিটাল একোয়ার্ড এবং কোনটি কমিউনিটি একোয়ার্ড তা অবশ্যই একজন চিকিৎসকের চিন্তার মাঝে রাখতে হবে। কমিউনিটি একোয়ার্ডে পাওয়া যাবে নিউমোকক্কাস অথবা হেমোফাইলাস জীবাণু আর হসপিটাল একোয়ার্ডে নিউমোনিয়া ঘটে থাকে সিউডোমোনাস অথবা এসাইনোবেক্টর জীবাণু দিয়ে নিউমোনিয়া নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হলো বুকের এক্স-রে। বুকের এক্স-রেতে যদি দাগ থাকে তাহলে নিউমোনিয়া আছে বলে ধরতে হবে। এ রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে এটাও জরুরি যে রোগটি কতটা ভয়ঙ্কর। এটা মাপার জন্য স্কোর করা যায়। এটা ছাড়াও মাপা হয় রোগীর ইউরিয়ার মাত্রা এবং অসংলগ্নতা আছে কিনা।
রক্তচাপ এবং শ্বাসের গতিও দেখতে হয়। বয়সটাও আমাদের খেয়াল করতে হয়। অনেক সময় ফুসফুসের ক্যান্সার থাকলে নিউমোনিয়া হতে পারে। যে জন্য নিউমোনিয়া চিকিৎসার এক মাস পর পুনরায় এক্স-রে করা হয়।
Comments are closed.