লক্ষ্মীপুরে তীব্র গ্যাস সংকটে নাজেহাল গৃহিণীরা
লক্ষ্মীপুরে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। এ অবস্থায় রান্না করতে নাজেহাল হচ্ছেন গৃহিণীরা।
সব মিলিয়ে বাসাবাড়ির গৃহিণীদের রান্না করাটা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোদিন রান্না করতে না পারলে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনতে হচ্ছে অনেককে।
গ্যাসের গ্রাহকদের অভিযোগ, নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গত দেড় মাস ধরে দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস পাচ্ছেন না। রাতে গ্যাস এলেও আবার ভোর না হতেই চলে যায়।
একই অবস্থা বিরাজ করছে বাণিজ্যিক লাইন এবং সিএনজি গ্যাস স্টেশনগুলোতে। গ্যাসের চাপ না থাকায় যানবাহনে সিএনজি গ্যাস ঢুকাতে পারছেন না চালকরা। তবে এ সংকটের কবে সমাধান হবে, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জান্নাতুল নাঈম বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। তাই রাতেই রান্না করে রাখি। গত দেড় মাস থেকে আমরা এ সমস্যার মধ্যে আছি।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমি আক্তার বলেন, দিনের বেলাতে গ্যাসের যে পরিমাণ চাপ থাকে, তা দিয়ে কোনোকিছু রান্না করা যায় না।
পৌর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খুকি বেগম বলেন, দিনে গ্যাস না থাকায় ভোর রাতে উঠে রান্না সারতে হচ্ছে।
শহরের দক্ষিণ তেমুহনী এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান মঞ্জু বলেন, ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে। সারাদিনে গ্যাস থাকে না। ভোর রাতে রান্নার কাজ সারতে হয়। এছাড়া বাড়তি টাকা খরচ করে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়েছি। দিনের বেলায় সিলিন্ডারে রান্নার কাজ করি।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, চুলায় গ্যাস না থাকায় কেউ লাড়কির চুলায় রান্না করছেন, কেউ সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। খাবার রান্না করতে গৃহিণীদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কোনো কারণে যারা রান্না করতে পারছেন না, তাদের খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক বলেন, নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করি। কিন্তু লাইনে গ্যাস পাওয়া যায় না। বাড়তি টাকা খরচ করে সিলিন্ডার ব্যবহার করি।
চন্দ্রগঞ্জ শাহী সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার রহমত উল্যা সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকায় যানবাহনে ঠিকমতো সিএনজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরের পৌর এলাকা এবং চন্দ্রগঞ্জ এলাকাতে গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে সংস্থাটির। এর মধ্যে রয়েছে দুটি সিএনজি গ্যাস স্টেশন। স্বাভাবিক নিয়মে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রতিদিন গড়ে গ্যাসের চাপ ৩০ থেকে ৩৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি পাউন্ড) প্রয়োজন পড়ে এ জেলায়। কিন্তু এ মুহূর্তে ২ থেকে ৩ পিএসআই সরবরাহ করা হচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে নগণ্য বলে জানিয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এসএম জাহিদুল ইসলাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ সুন্দলপুর এবং বেগমগঞ্জের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গত এক মাস ধরে সুন্দলপুরে গ্যাস সংকটের কারণে সরবরাহ বন্ধ হয়ে আছে। এখন শুধু বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। লক্ষ্মীপুরে যে গ্যাস লাইন এসেছে তা ১৫০ পিএসআই চাপ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু এই চাপে এ পর্যন্ত কখনো গ্যাস আসেনি। স্বাভাবিক সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ পিএসআই চাপে গ্যাস আসতো। কিন্তু এ মুহূর্তে ২ থেকে ৩ পিএসআই চাপে গ্যাস আসছে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। এ জন্য গ্রাহকরা গ্যাস কম পাচ্ছেন। এছাড়া শীত মৌসুমের কারণেও গ্যাসের চাপ কিছুটা কম থাকে।
তবে গ্যাসের এ সমস্যা কবে নাগাদ সমাধান হবে তা জানাতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
Comments are closed.