ফেনীর শতবর্ষের ঐতিহ্য ‘রাজাঝির দীঘি’
রাজাঝির দীঘি বা রাজনন্দিনীর দীঘি ফেনীর একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। ফেনী জেলার জিরো পয়েন্টে ফেনী রোড ও ফেনী ট্রাংক রোডের সংযোগ স্থলে এটি অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, ত্রিপুরা মহারাজের একজন রাজার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার মানসে এ দীঘি খনন করেন। স্থানীয় ভাষায় কন্যা-কে ঝি বলা হয় তাই দীঘিটির নামকরণ করা হয় ‘রাজাঝির দীঘি’। ১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয় এই রাজাঝির দীঘির পাড়ে। দীঘির পাড়ে বর্তমানে ফেনী সদর থানা, ফেনী কোর্ট মসজিদ,অফিসার্স ক্লাব, ফেনী রিপোর্টাস ক্লাব, জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্ক সহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে।
এ দীঘিটি ফেনীর শতবর্ষের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের একটি। কিছুদিন আগে ময়লা-আবর্জনা পড়ে ও দীঘির চারপাশে দোকান বসে দীঘির সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে দীঘির ঐতিহ্য ও রুপ ধরে রাখার জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসক ও ফেনী পৌরসভা। ফেনী পৌরসভা দীঘির তিন দিকে উত্তর-দক্ষিণ- পূর্ব পাশে দেওয়াল নির্মাণ করে। দর্শানার্থীর বসার জন্য পূর্ব-দক্ষিণ পাশে গাড়ের উপর পাকা সিঁড়ি বানানো হয়েছে।
বিকেল বেলায় সর্বস্তরের লোকজন এসে বসে যাতে সময় কাটায় পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোকজন অবাদে চলাচলের জন্য দীঘির দুই পাশ কিছুটা উম্মুক্ত আছে। উত্তর ও পশ্চিম, বাকি দুইপাশে হকার দোকান বসে। তবে দীঘির জল যাতে সবাই স্পর্শ করতে পারে, সেইজন্য তিন পাশে পাঁচটি সিঁড়ির নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘিটি প্রায় ১০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত।দীঘির পাড়ে প্রত্যেকদিন সব বয়সের লোক আনাগোনা দেখা যায়।
ফেনী শহরের মধ্যে এ রকম আর কোনো দর্শনীয় জায়গায় নেই। মানুষে সময় পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে যাবে।ফেনীর স্থায়ী জনগণ ও সাংবাদিকরা জানান, ফেনীতে সাধারণ জনগণ অবসরে বিনোদনের জন্য শহরে উল্লেখযোগ্য কোন জায়গা নেই একমাত্র রাজাঝি দীঘি ছাড়া। দীঘি এক সময় বেদখলে চলে গিয়েছি।
জেলা প্রশাসক ও ফেনী পৌরসভা অবৈধদখল থেকে দীঘি উদ্ধার করে সুন্দর উদ্যোগ নিয়ে দীঘির সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করছে। এতে ফেনীবাসী খুশি।
এদিকে ফেনী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি জানান, দীঘির সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য পৌরসভা ৪ কোটি টাকার জলবায়ু প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছিল। কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দীঘির চারপাশে জনসাধারণের হাঁটার জন্য দেয়াল, সিঁড়ি ও ফুল বাগান নির্মাণের কাজ শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি। তিনি বলেন, কাজ পুরোপুরি শেষ হলে দীঘির হারানো সৌন্দর্য্য কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে এবং শহরের সবশ্রেণির মানুষ সকাল-বিকেলে দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান জানান, জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিবাহী ফেনীর রাজাঝির দীঘি। দীঘিটি হল শহরের সৌন্দর্য। দীঘির চারপাশে হাঁটার ব্যবস্থা আছে, তবে দীঘির চারপাশ ব্যক্তি দখলে চলে গেছে। সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ফেনী পৌরসভা কাজ শুরু করছে। দীঘির চারপাশে অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদের আশ্বাস দেন তিনি।