পরিবহন শ্রমিকদের লকডাউনে কষ্টকর জীবন যাপন
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে চলছে সাধারণ ছুটি। আরোপ করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। মানুষের জীবনের নিরাপত্তায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে সরকারি পদক্ষেপ। তবে একাধিক বিধিনিষেধের মধ্যেও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে পণ্যবাহী যান চলাচল। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, কল-কারখানা, বাজার সবই বন্ধ তাই পণ্য পরিবহনও নেই। এমন পরিস্থিতিতে নিদারুন অর্থ কষ্টে দিন কাটছে পরিবহন শ্রমিকদের। অনেক শ্রমিকের পেটে ঝুটছে না দু’বেলা দু’মুঠো খাবার।
‘ট্রিপ পাইলে মালিকের ইনকাম হয়, আমাদেরও হয়। একসময় খোরাকি ছিল এখন নেই। গাড়ি চললে বেতন, নইলে নাই।’ কথাগুলো মিনিট্রাক চালক আবদুল লতিফ (৩৮) বলছিলেন নিজের অর্থকষ্ট নিয়ে।
ফেনী জেলা ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে ৬ হাজারের অধিক। এর বাইরে রয়েছে অসংখ্য গণপরিবহন ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক।
করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান পরিস্থিতিতে নিজ সংগঠনের সদস্য পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, গাড়ি চললে শ্রমিকের পরিবারের ভাত জোটে। সরকার কাঁচামাল, খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে গাড়ি চালানোর অনুমতি দিলেও পরিবহনের চাহিদা বাজারে নেই। প্রতিদিন চালকদের ফোন পাচ্ছি, তারা অভাবের কথা বলছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শক্রমে কম মূল্যে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য রেশনের চালের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও ফেনী জেলা ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম নবী। তিনি বলেন, সরকার পণ্য পরিবহনে নিষেধ করেনি কিন্তু চালকরা নিজ থেকে কর্মবিরতি দিচ্ছে। তারা কাজ না করে বাড়ি বসে থাকলে আমাদের কী করার আছে?
কাজ নেই মর্মে পরিবহন শ্রমিক নেতার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমার কাছে পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর থেকে ট্রাক চাচ্ছে কিন্তু চালকের অভাবে গ্রাহকে চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। ফলে আমরাও আার্থিক কষ্টে পড়ে গেছি।
ফেনী জেলা ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু শাহীন মালিক পক্ষের সভাপতির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, মহাসড়কে সব ধরনের হোটেল বন্ধ হওয়ায় আমাদের সদস্যরা খাদ্য সংকটে পড়ছে। পণ্যবাহী পরিবহন দীর্ঘসময় রাস্তায় চলে ফলে হোটেল খোলা না থাকলে তাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। যদিও এ বিষয়ের কিছুটা সমাধান হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় কিছু হোটেল চালু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী বলেন, রাস্তায় হোটেলের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু এটাই একমাত্র সমস্যা নয়।
মালিক সমিতির সভাপতির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বড় দুঃখ হলো মালিকরা কখনো আমাদের খবর রাখে না। মিল কারখানা বন্ধ, কাঁচামালও পরিমাণে কম তাই কাজ নেই।
ফেনী জেলা ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমীর হোসেন মোজাম্মেল চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মালিক শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তায় কোনো ফান্ড আমাদের নেই। কারণ আমরা কোনোরকম চাঁদা আদায় করি না। তাছাড়া সংগঠনে যারা আছে তাদের বেশিরভাগই সহায়তা করার মতো অবস্থায় নেই। অনেকে আছে যারা একটি গাড়ির আয় দিয়ে সংসার চালান। শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু করা প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাপার।
Comments are closed.