নোয়াখালীর নির্মিত বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানের করার দাবি
নোয়াখালী বাংলাদেশের প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী অঞ্চল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলে শিল্প সম্ভাবনার বিকাশ ঘটে। তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলে এবং এ অঞ্চলের মানুষদের কর্তৃক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সুবিধার অভাবে ধ্বংসের মুখে পতিত হয় নোয়াখালী অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনা। তখনই চিন্তা করা হয় এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারতা বাড়াতে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা।
১৯৯৫ সালে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদী হতে ১০ কি. মি. দূরে চর শুল্লকিয়া নামক স্থানে সরকারিভাবে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য তৎকালীন সময়ে প্রায় ২০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। নির্মাণ সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের রানওয়ে, যেখানে প্রাথমিকভাবে খরচ হয় প্রায় ২ কোটি টাকা। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সংযোগ সড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ। দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি, যার ফলে থমকে যায় নোয়াখালীর শিল্প সম্ভাবনা এবং পরবর্তীকালে আর তেমন কোন উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি এ অঞ্চলে।
নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত আছে এ অঞ্চলের মানুষ যারা প্রতিনিয়তই রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে করেছে সমৃদ্ধশালী। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের প্রায় ৪০% নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষদের অবদান রয়েছে যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় ১৫ লক্ষ প্রবাসী। তাই প্রবাসীদের সুযোগ ও সুবিধার কথা চিন্তা করে এখানে একটি বিমানবন্দর জরুরি।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় নোয়াখালী অঞ্চলে প্রবাসীদের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। নোয়াখালীর এ প্রবাসীরা এখন রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে যাতায়াত করে। বর্তমানে একটা বিষয় অবাক লাগে বিদেশ থেকে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা আসতে সময় লাগে যেখানে ৩-৪ ঘন্টা সেখানে তাদের ঢাকা থেকে নোয়াখালী আসতেই লাগে ৭-৮ ঘন্টা। এতে তাদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি। প্রবাসীদের সিংহভাগ অংশ নোয়াখালীর বলে নোয়াখালীতে বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হলে তারা বিদেশ থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে নোয়াখালীতেই আসতে পারবে। এতে তাদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
তাই আগামী ২২ জুলাই নোয়াখালীর সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে প্রস্তাবিত নোয়াখালী বিমান বন্দরের স্থান পরিদর্শনে আসছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি। নোয়াখালীবাসীর পক্ষ থেকে একাটাই দাবি যাতে বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে নির্মাণ করা হয়।
নোয়াখালীর প্রবাসীরা ছাড়াও এতে উপকৃত হবে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও পাশ্ববর্তী জেলার প্রবাসীরা। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদের সুবিধার্থে নোয়াখালীতে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
Comments are closed.