নোয়াখালীর কন্যা স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আবারো রংপুর থেকে নির্বাচন করছেন
নোয়াখালীর সন্তান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারো এমপি প্রার্থী হচ্ছেন রংপুর থেকে।
নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
তৎকালীন স্পিকার মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে স্পিকারের মহান দায়িত্ব পড়ে ড. শিরীন শারমিনের ওপর। দশম সংসদেও স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ড. শিরীন শারমিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সংসদ ভবনে সপ্তাহে অন্তত এক দিন ওই এলাকার জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের কাছ থেকে এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকি করেন। নিজের পক্ষে এখনো সরাসরি ভোট না চাইলেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্পিকার নিজের পক্ষে ভোট না চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পক্ষে ভোট চেয়েছেন।
গত ৪ অক্টোবর উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার উপকারভোগী মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এ সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ওই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মতবিনিময়ের একপর্যায়ে বক্তৃতা করছিলেন উপকারভোগী প্রতিবন্ধী আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘আমি হঠাৎ গুরুতর এক অসুখে অচল হয়ে যাই। আপনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের গড়ে তোলা অটিস্টিক চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে এখন ভালো আছি। আমাদের এমপি শিরীন শারমীন চৌধুরীও এলাকার প্রতিবন্ধী ও গরিবদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। যে কারণে আমরা এখন ভালো আছি। ’
সাধারণ একজন গ্রামবাসীর এমন বক্তব্যে অভিভূত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিরীন আমার আরেক কন্যা। আগামীতে তাঁকে ভোট দেবেন তো?’ ওই সময় রংপুরে ভিডিও সেটের সামনে উপস্থিত সবাই হাত তুলে হ্যাঁসূচক জবাব দেয়।
সম্প্রতি স্পিকারের দপ্তরে এ বিষয়ে আলাপকালে ড. শিরীন শারমিন বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে যেটুকু দায়িত্ব আছে, তা পালনের চেষ্টা করছি। আর নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়টি দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ’
তবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আগামী নির্বাচনেও সমর্থন চাইতে দেখা দেখা গেছে স্পিকারকে। চলতি সংসদের ২২তম অধিবেশন শেষে গত ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। ওই সব কর্মসূচিতে তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আগামী দিনেও অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। পীরগঞ্জের বড় দরগাহ ও ভেণ্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ আয়োজিত উন্নয়নমূলক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্জন তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাচিত চেয়ারপারসন হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিসহ নানা ইস্যুতে তিনি জাতিসংঘ, আইপিইউসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
স্পিকার শিরিন সারমিন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চাটখিল উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের বারই পাড়াতে। তিনি বঙ্গবন্ধুর এপিএস রফিকুল্যাহ চৌধুরীর কন্যা।
Comments are closed.