নিঝুম দ্বীপে হরিণের কান্না
মেঘনার পাশেই সবুজ বনবেষ্টিত জীববৈচিত্র্যের অপরূপ সমারোহ আর চারদিকে প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যের লীলাভূমি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ। আর এই নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় হরিণের দেখা পাওয়া। এখানে আছে জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনভূমি।
৮১ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিকে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদী ঘিরে রেখেছে। ১৯৫০ সালে চর জাগে। তবে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর আরও তিন বছর দ্বীপটি ছিল জন মানবহীন। ১৯৭৩ সালেই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। হাতিয়া বা মনপুরা থেকে স্পিডবোটে সহজেই যাওয়া যায় এই দ্বীপে।
জানা যায়, এটি হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় ২৫ হাজার একর বনভূমি নিয়ে গড়ে ওঠা নিঝুম দ্বীপে ১৯৭৩ সালে জনবসতি শুরু হয়। জনবসতি শুরু হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে সাবেক বন ও ক্রীড়ামন্ত্রী নিঝুম দ্বীপে ৪ জোড়া চিত্রা হরিণ অবমুক্ত করেন। ৪/৫ বছর আগেও দ্বীপের যেকোন স্থান থেকে চোখ ফেরালেই দেখা যেত মায়াবী হরিণের পাল। দ্বীপের বনাঞ্চল ছাড়াও রাস্তাঘাটের পাশাপাশি লোকালয়েও দলবেঁধে ঘুরে বেড়াত হরিণ। সম্প্রতি সময়ে হরিণের পরিমাণ খুব কম।
খাদ্যের অভাব, বন্য কুকুরের আক্রমণ, আবাসন সংকট, লবনাক্ত পানি ও প্রভাবশালীদের হরিণ শিকার এবং রেঞ্জ কর্মকর্তাদের অবহেলাসহ নানা কারণে নিঝুম দ্বীপে হাজার হাজার হরিণের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে হরিণের সংখ্যা। নষ্ট হচ্ছে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সেখানে বনদস্যু ও জলদস্যুদের মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৃক্ষ নিধন হওয়ার কারণে হরিণের খাদ্য সঙ্কট প্রবল আকার ধারণ করেছে।
অপরদিকে মিঠা পানির ব্যবস্থা না করায় লবনাক্ত পানির কারণে হরিনগুলোতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি। এদিকে ৪০ হাজার হরিণের জন্য পর্যাপ্ত মিঠা পানির ব্যবস্থা না থাকায় পানির সন্ধ্যানে বনের হরিণগুলো লোকালয়ের চলে আসছে অহরহ। এ ছাড়া হরিণের প্রধান খাদ্য কেওড়াগাছের পাতা। গাছগুলো বড় হয়ে গেলে তা হরিণের নাগালের বাইরে চলে যায়। বনের ভেতরের অনেক খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেলে হরিণের খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। বনে বানর নেই বলে গাছের ফল বা পাতা নিচে সেভাবে পড়ে না। বিভিন্নভাবে খাদ্যসংকটে হরিণ বিভিন্ন চর ও লোকালয়ে চলে আসে। তখন তারা মানুষের আগ্রাসনের শিকার হয়।
এ ব্যাপারে নিঝুম দ্বীপ চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, এক একটি মা হরিণ বছরে দুইবার কমপক্ষে দুটি করে চারটি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। এ হিসেবে নিঝুম দ্বীপে ১৫ হাজারের মত মা হরিণ থেকে প্রতি বছরে ৬০ হাজারের মত হরিনের বাচ্চা জন্মানোর কথা। এ থেকে এক তৃতীয়াংশ বেঁচে থাকলেও প্রতি বছরে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ২০ হাজার হরিণ। বন বিভাগের হিসাব মতে নিঝুম দ্বীপ থেকে প্রতি বছর ২০ হাজার হরিণ রপ্তানী করা সম্ভব। প্রতিটি হরিণের মূল্য গড়ে ২৫ হাজার করে ধরা হলে বছরে নিঝুম দ্বীপ থেকে ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব।
স্থানীয়রা মনে করেন, দিন দিন হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
Comments are closed.