একজন সংবাদ কর্মীর বিশেষ সহযোগীতায় রাস্তার মহিলাটি ফিরে পেল তার সংসার
রাস্তায় মানবেতর দিন যাপন করছে বহুদিন। দাঁড়নোর শক্তি নেই, যেন জীবিত কঙ্কাল। চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে কচ্চপ গতিতে চলছে গন্তব্যহীন। ক্ষুদা আর অসুস্থতার যন্ত্রনার চিৎকারে আশ পাশের পরিবেশ সাড়া দিতে চাইলেও অসহ্য দুর্ঘন্ধে কেউ পাশে ঘেষছেন না। রাস্তায় এমন ভাবে চলতে দেখে একজন লোক একটি ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করলে মুহুর্তেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। নজরে আসে ফেনীর পথের ফুল নামে একটি সেচ্চাসেবী সংগঠনের। তারা কক্সবাজার থেকে তুলে এনে চিকিৎসা দেন চট্রগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে।
পরিবারে সন্ধান চেয়ে তারাও ফেসবুকে আপলোড করেন। তথ্য হিসেবে মহিলার ভাষ্য আমার বাড়ি চর বৈশাখী গ্রামে আমার বড় মেয়ে নয়নি এবং আমি অমুকে এর বোন লিখে আপলোড করে। মানবিক আবেদনময় এ বিষয়টি চতুর্ধিকে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কোন জেলা বা উপজেলা মহিলাটি বলতে পারেনি । তবে আঞ্চলিক ভাষ্যমতে ধারনা ভিত্তিক তার বাড়ি নোয়াখালী হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
বিষয়টি সপ্তাহ খানেক পর বৃহস্পতিবার সকালে নজরে আসে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার স্থানীয় সংবাদ কর্মী আরিফ সবুজের। এবং তার বাড়ি চর বৈশাখী হওয়ায় মহিলাটিকে সনাক্ত করতে পারে। সাথে সাথে মহিলার ছেলেদের খবর দিলে তারা ফেসবুকে তাদের মায়ের ছবি দেখে সনাক্ত করে। এবং তাদের মাকে ফিরেয়ে আনতে আরিফ সবুজকে অনুরোধ করে।
পরে ফেসবুকের মাধ্যমে পথের ফুল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে আরিফ সবুজ। জাহিদ জানান, বিষয়টি ভাইরাল হলে মহিলাটিকে নিতে আসে চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামক একটি বৃদ্ধাশ্রম । তারা বৃহস্পতিবার সকালেই ওই মহিলাকে বৃদ্ধাশ্রমে তুলে দেন।
তাৎক্ষনিক আরিফ সবুজ মহিলার দুই ছেলেকে নিয়ে রওনা হন ঐ বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজে ঢাকার পথে। রাত শেষে সকালে খুজতে খুজতে অবশেষে মিরপুরের কল্যানপুরের মধ্য পাইকপাড়ায় ৪৬২/৮ নাম্বার বাড়িতে অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ পায়। কথা হয় বৃদ্ধাশ্রমের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিল্টন সমাদ্দারের সাথে ।
অফিসিয়ালি জটিলতা মিটিয়ে অবশেষে জুমাবার দুপুরে মায়মুনাকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পথে রওনা দেয়া হয়। একজন মাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তার সন্তানদের কাছে। মা তার সন্তানদের বুকে পায়। মিলিত হয় একটি পরিবার।
প্রসঙ্গত, মহিলাটি প্রায় অর্ধযুগ আগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের ২নং নাসির পুর গ্রামের মহিলার বড়ছেলে মিরাজের বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের হলে আর ঘরে পেরেনি। মায়মুনা দীর্ঘ্য ২২ বছর থেকে মানসিক রোগী । তার তিন ছেলে মিরাজ উদ্দিন(৩৫),ইরাক উদ্দিন(২৮) ও সাহাব উদ্দিন(২৫) এবং তিন মেয়ে নয়ন তারা(৪৪),কুলসুমা(৪২) ও রিপলা খাতুন(৪০)।
এ ব্যপারে তার সন্তানদের কাছে অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ,তারা এ মহৎ কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য মায়মুনাকে তার স্বামী সিরাজ উদ্দিন প্রায় ৩০বছর আগে ছেড়ে ২য় বিয়ে করে আলাদা সংসার করে আসছেন।
অন্যদিকে আরিফ সবুজ জানান, এমন একটি মহৎ কাজ করতে পেরে নিজেকে স্বার্থক মনে করছেন। এবং তিনি একাজে পথের ফুল ফাউন্ডেশনের জাহিদুল ইসলাম,হোসনে আরা বেগম,সালাউদ্দিন মো. রাসেল,জয়নাল আবেদীনসহ এ সংগঠন ও চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে বিশেষ সাধুবাদ জানান।
Comments are closed.